সারা জীবন সৎ থেকেছি


M. Anis Ud Dowla

Chairman, ACI Group

সারা জীবন সৎ থেকেছি
কৃষি খাতের মানুষগুলোই সবচেয়ে নিগৃহীত, সবচেয়ে গরিব। ভালো করতে গেলে তো কৃষি খাতে কত রকমের ব্যবসাই আছে। তবে আমরা গিয়ে দেখলাম, কৃষি খাতে জমি চাষ করাই হলো সবচেয়ে বড় কাজ, কৃষকের সেখানেই সবচেয়ে বেশি খরচ হয়। দুটি গরু রাখা, সেগুলোর লালন-পালন; বছরে তিন-চার মাস সেগুলো দিয়ে চাষ করা, বাকি সময় এই গরুগুলো খায় আর বসে থাকে। ফলে ভারতের একটি কম্পানির মাধ্যমে আমরা একটি ভালো ট্রাক্টর ডিজাইন করালাম। সেই ট্রাক্টরটি যেন কৌণিকভাবে ঘুরে একেবারে কোনার মাটিটুকুও চাষ করতে পারে, সে জন্য তারা সেটির বিশেষভাবে নকশা করল। এটি অনেকের কাছেই অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষকদের শতকরা ১০০ ভাগ জমির ৫ শতাংশ সেখানেই রয়েছে

আপনার জন্ম?

১৯৩৭ সালে ফরিদপুরে আমার জন্ম। আব্বা খান বাহাদুর ইসমাঈল সাহেব প্রতিথযশা আইনজীবী, বাংলায় প্রথম মুসলমান সরকারি নেতা ছিলেন। তিনি স্বাধীনচেতা, অত্যন্ত দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, ন্যায়নিষ্ঠ মানুষ ছিলেন। সব সময় তিনি আমাদের বলতেন, ‘ইংরেজি শেখো, ভবিষ্যতে ভালো করতে পারবে।’ তাঁর কথা ছিল—‘দিনে একটি হলেও ইংরেজি শব্দ শেখো।’ তিনি ব্ল্যাকবোর্ড কিনে দিয়ে বলেছিলেন, ‘যে শব্দটি অজানা, প্রথমে অভিধানে দেখে উচ্চারণ করো; এরপর বোর্ডে লিখে রাখো; যতবার এই বোর্ডের সামনে দিয়ে যাবে, ততবার তাতে চোখ পড়বে; ততবার শব্দটি বানান করবে, পড়বে।’ এভাবে তিনি আমাদের তিন ভাই (আসাফ উদ দৌলা ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মসিহ উদ দৌলা) ও এক বোনকে (ফিরোজা বেগম, বিখ্যাত নজরুলসংগীত শিল্পী) ইংরেজি শিখিয়েছেন। ফরিদপুরের মানুষ হয়েও আমি যে পরে করাচি গিয়ে পড়ালেখা করেছি, ইংল্যান্ডেও গিয়েছি; ইংরেজি ভাষা জানা ছিল বলে কোনো দিন কোনোখানে কোনো অসুবিধা হয়নি। আমরা তিন ভাই-ই ইংরেজিতে ভালো, পড়ালেখায়ও তাই সব সময় ভালো করেছি।

তাঁর আর কোনো শাসন ছিল?

আব্বার আরেকটি শাসন ছিল, সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে তাঁর সঙ্গে সালাত (নামাজ) আদায় হবে। সুতরাং দুষ্টুমি করার সময় আমাদের হয়নি। বিকেলে খেলার পর বাসায় দেরি করে ফেরা, দুষ্টুমি করার অনেক সুযোগ সে বয়সে থাকে, সেসব করার সুযোগ হয়নি। তিনি আমাদের সেসব কর্ম থামিয়ে দিয়ে বলতেন, ‘তোমরা তিন ভাই-ই তোমাদের বন্ধু, বাইরের বন্ধুত্ব তো তোমাদের প্রয়োজন নেই।’ এভাবে আমরা তাঁর শাসনে মানুষ হয়েছি।

মায়ের কাছে কী শিখেছেন?

আমার মা কাকাবুন্নেসা অত্যন্ত কর্মঠ ছিলেন। আরবিতে তাঁর খুব দক্ষতা ছিল। তিনিই আমাদের আরবি শিখিয়েছেন, আমাদের সৎ মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনিই আমার জীবনে সবচেয়ে প্রভাব ফেলেছেন। তাঁর এই গুণটিই আমার জীবনের পাথেয়। আমি সারা জীবন সৎ থেকেছি। সাধারণভাবেই আমরা মানুষ হয়েছি। জীবনযাপনে কোনো বাহুল্য ছিল না, কিন্তু কোনো অভাবও ছিল না। যখন যা করতে চেয়েছি, পেরেছি। যে যে বিষয় নিয়ে পড়তে চেয়েছি, আব্বা কোনো বাধা দেননি। তাঁর জীবনের একটি গল্প বলি, যেটি আমার জীবনেও বিরাট শিক্ষা—লেখাপড়া শেষ করার পর তাঁকে বলেছিলাম, ‘আপনি ওমুক ভদ্রলোককে একটু বলে দিন।’ খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে তিনি বললেন, ‘তোমাকে আমি পড়ালেখা করিয়েছি, তোমার নিজের ব্যবস্থা এখন নিজেকেই করে নিতে হবে। কাউকে বলতে পারব না।’ অথচ যাঁকে বলতে বলেছিলাম, তিনি তাঁর বিশেষ বন্ধু ছিলেন। তিনি আমাদের ভাই-বোনদের কারো কোনো কাজে সাহায্য করেননি। ফলে মুক্ত চেতনার মানুষ হয়ে আমরা বেড়ে উঠেছি। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। এই খেলাধুলা করার একটু সুযোগ হলো, জীবনে সামান্য স্বাধীনতাও এলো। আমরা খেলাধুলায়ও খুব ভালো করেছি। ছোট ভাই আসাফ উদ দৌলা করাচিতে গিয়ে পুরো পাকিস্তানের ব্যাকস্ট্রোক সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমি ফজলুল হক হলের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তিনবার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্লু’ ছিলাম। চার বিভাগে প্রথম হতাম। পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম।

করাচিতে গেলেন কিভাবে?

পদার্থবিদ্যায় পড়ে তো চাকরির খুব সুযোগ ছিল না; আণবিক শক্তি কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিছু চাকরি ছিল। ফলে টেনশন হতো, লেখাপড়া শেষে কী করব? তখন ‘এশিয়া ফাউন্ডেশন’ একটি বৃত্তি দিল—প্রতিবছর পাঁচজন বাঙালিকে নির্বাচিত করবে এবং তাঁরা করাচিতে গিয়ে লোকপ্রশাসনে পড়বেন। এরপর ইস্ট পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সিএসপি হবেন। আমরা ৩০০ ছেলে আইকিইউ টেস্ট দিলাম। সেরা পাঁচজনের মধ্যে রইলাম। ব্যস, করাচি চলে গেলাম। সেখানে তাদের নতুন জীবন, জীবনধারা দেখলাম। চোখ খুলে গেল—পৃথিবীতে কত কিছু করার সুযোগ আছে। দুই বছর পর পরীক্ষায় পাস করলাম। এখন সিএসপি পরীক্ষা দিতে হবে। ঢাকায় এসে পরীক্ষা দিলাম। করাচিতে কতগুলো চাকরি আবেদনপত্র জমা দিয়ে এসেছিলাম, সেগুলোর সাক্ষাৎকারের ডাক আসতে লাগল। সেভাবেই ‘আইসিআই (ইমপেরিয়াল কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ)’-এর পাকিস্তান অক্সিজেনে ‘ব্রাঞ্চ ম্যানেজার’ হিসেবে নিয়োগ পেলাম। প্রথম চাকরিতেই ‘অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ পেলাম। এই আমার জীবন শুরু হলো।

সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা দিয়েছিলেন?

তাতেও ভালো করলাম। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি, মৌখিকের জন্য ডাক এলো। তখন পাকিস্তান অক্সিজেনে শিক্ষানবিশকাল চলছে। ঢাকায় মৌখিক পরীক্ষা দিতে আসতে হবে। মৌখিকে অবশ্যই ভালো করব, কারণ আমি তো ইংরেজি জানি। করাচিতে থেকে আরো পোক্ত হয়েছি। বাঙালির ছেলে হিসেবে আমার দূরদৃষ্টি অনেক বেশি, সুদূরপ্রসারী। নিজের সঙ্গে নিজে অনেক বোঝাপড়া করলাম—একদিকে ক্ষমতার মোহ, সিএসপি হব; অন্যদিকে জীবনের অন্য রকম বাসনা। সিএসপিদের মাইনে তখন ৭৫০ টাকা। অথচ তখন আমার বেতন দুই হাজার। টাকার ব্যবধান অনেক। অবশেষে স্থির করলাম, জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যই বেশি প্রয়োজন। শক্তি, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, মানুষের অনেক প্রশংসা—এগুলো ভালো লাগলেও আর্থিক সক্ষমতাই সবচেয়ে প্রয়োজন ভেবে অক্সিজেনে থেকে গেলাম। পরে প্রমাণ হয়েছে, এটি আমার জীবনের জন্য ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। সেই ক্যারিয়ারেও ভালো করেছি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ অক্সিজেনের প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়েছি।

অক্সিজেনের ক্যারিয়ার?

টানা ২৭ বছর এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ তো একটি ক্ষুদ্র পরিসর; ফলে ব্রিটিশ অক্সিজেন অন্যান্য দেশে কম্পানি সম্প্রসারণের চেষ্টা করল। সেটির অংশ হিসেবে তাঁরা আমাকে কেনিয়ায় পাঠালেন। পাঁচ বছরের নিয়োগ, সেখানেও ভালো করেছি। নানা উপজাতির মানুষ নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। আমার কাজে খুশি হয়ে তাঁরা চাইলেন, আমি যেন সে দেশেই থাকি, কিন্তু আমি চাইছি সেই দেশ থেকে বেরিয়ে, আফ্রিকার সীমানা পেরিয়ে; ইউরোপের বড় পরিবেশে, আরো অনেক উন্নত দেশে যাব। এই দোলাচলে ভুগছি, আইসিআই বাংলাদেশে তাদের তিনটি কম্পানির জন্য একজন গ্রুপ ম্যানেজার নেবে। আবেদন করলাম। লন্ডনে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাক এলো। পরদিন তাঁরা আমাকে বাংলাদেশে গ্রুপ ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করতে বলল এবং কী কী চাই জানতে চাইল। ভালো শর্তেই যোগদান করলাম। কেনিয়া ছেড়ে নিজের দেশে চলে এলাম।

বাংলাদেশের কর্মজীবন?

দেশে তখন আমরা ফার্মাসিউটিক্যালসে ছিলাম। আমাদের কাঠামো খুব খারাপ। দেদার লোকসান গুনছে। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ঠিক করে একে লাভে নিয়ে আসতে বছর পাঁচেক লাগল। এরপর আমরা বেশ ভালো অবস্থানে এলাম। তবে কর্তৃপক্ষ আমাকে বললেন, ‘আনিস আমরা খুবই দুঃখিত যে তোমাকে ডেকে নিয়ে এসেছি। তোমার ক্যারিয়ারের ক্ষতি হবে, কিন্তু আমরা ছোট দেশগুলোতে অক্সিজেনকে আর রাখব না।’ খারাপ লাগল, এত দিনের প্রতিষ্ঠান, কিন্তু পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে আমার তো কোনো অসুবিধা নেই। আইসিআইতে কাজ না করলে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করব। তবে তাঁদের সঙ্গে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল, তাঁরা আমার কাজ সম্পর্কে জানতেন। ফলে ভাবতেও পারিনি এমন একটি অফার তাঁরা আমাকে দিলেন—‘তুমি যদি রাজি থাকো, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের সাড়ে তিন শ কর্মীর দায়ভার যদি নাও, তাহলে আইসিআই তোমার হাতে তুলে দেব।’ বললাম, ‘আমার কাছে তো এত পয়সা নেই।’ তাঁরা বললেন, ‘পয়সা আমাদের কাছে বড় নয়, সবচেয়ে বড় হলো আইসিআইয়ের সুনাম; সেটি তুমি ধরে রাখতে পারবে বলেই একে তোমার হাতে তুলে দেব।’ তাঁরা প্রস্তাব করলেন, ‘উপার্জন করে পয়সা ফেরত দেবে।’ তার পর থেকে আজ ২৫ বছর হলো এই প্রতিষ্ঠানের দায়ভার আমার কাঁধে, নাম দিয়েছি ‘এসিআই লিমিটেড’, যাতে যতটা সম্ভব আইসিআইয়ের কাছাকাছি থাকতে পারি। এসিআইতে আমি আমার ব্যবসাকে এমনভাবে দাঁড় করিয়েছি, যাতে আমাদের কাজে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটে; যা-ই করি না কেন, এটি যেন মানুষের জীবনকে উন্নত করে। সে জন্যই প্রথমেই আমরা কৃষি খাতের দিকে নজর দিলাম।

কৃষি খাতে কেন এলেন?

কারণ এই মানুষগুলোই সবচেয়ে নিগৃহীত, সবচেয়ে গরিব। ভালো করতে গেলে তো কৃষি খাতে কত রকমের ব্যবসাই আছে, আমরা সেদিকে যাইনি। আমরা গিয়ে দেখলাম, কৃষি খাতে জমি চাষ করাই হলো সবচেয়ে বড় কাজ, কৃষকের সেখানেই সবচেয়ে বেশি খরচ হয়। দুটি গরু রাখা, সেগুলোর লালন-পালন; বছরে তিন-চার মাস সেগুলো দিয়ে চাষ করা, বাকি সময় গরুগুলো খায়, বসে থাকে। ফলে ভারতের একটি কম্পানির মাধ্যমে আমরা ভালো ট্রাক্টরের ডিজাইন করালাম। সেটি যেন কৌণিকভাবে ঘুরে একেবারে কোনার মাটিটুকুও চাষ করতে পারে, সে জন্য তারা বিশেষভাবে নকশা করলেন। এটি অনেকের কাছেই অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের কৃষকদের শতকরা ১০০ ভাগ জমির ৫ শতাংশ সেখানেই রয়েছে। আর জমিগুলোও তো ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত। ফলে বাজারে বা দেশে প্রচলিত অন্য ট্রাক্টরগুলোর তুলনায় আমাদের এই বিশেষ ট্রাক্টর অনেক বেশি কার্যকর। এটি ছাড়াও কৃষকদের জন্য আমরা পাওয়ার টিলার, হারভেস্টর (ফসল মাড়াই ও বাঁধাইয়ের যন্ত্র), এখন ধান রোপণের যন্ত্র, গুটি ইউরিয়া সার দেওয়ার যন্ত্র—এসব প্রাযুক্তিক চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে এসেছি। এ জন্য আমাদের আলাদা বিভাগই আছে, নাম ‘এসিআই মোটরস’। এটি কৃষকদের প্রযুক্তিবান্ধব চাষাবাদে সাহায্য করতে নিয়োজিত রয়েছে। আমাদের এই বিভাগে সারা দেশে ছয় শ মেকানিক আছেন। আমাদের গ্যারান্টি হলো—আপনি যেকোনো জায়গায়, দেশের যেকোনো প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মোবাইলে একটিমাত্র ফোন করলেই আপনার সবচেয়ে কাছাকাছি যে ডিলার রয়েছেন; ছয় ঘণ্টার মধ্যে যন্ত্রপাতি নিয়ে তিনি তাঁর মেকানিককে আপনার কাছে হাজির করবেন। যেন ছয় ঘণ্টার মধ্যেই সেই সমস্যার সমাধান হয় সে জন্য আমাদের কম্পানিকে প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। এর কম সময়ে হলে আরো ভালো; কিন্তু ছয় ঘণ্টা কোনোভাবেই পেরোনো যাবে না। আমাদের ট্রাক্টর ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—কৃষকের লাঙল সাড়ে তিন ইঞ্চি জমির গভীরে গিয়ে সেটিকে চাষোপযোগী করতে পারে। এই ট্রাক্টরে তার দ্বিগুণ গভীরে গিয়ে জমিকে চাষোপযোগী করতে পারে। প্রতি এক ইঞ্চিতে ১০ শতাংশ করে উৎপাদন বাড়ে। সুতরাং ট্রাক্টর যে শুধু আর্থিক দিকেই কৃষকের জন্য সুবিধা নিয়ে আসছে তা নয়, এটি জমির উৎপাদনক্ষমতাও বাড়াচ্ছে। এই ট্রাক্টর কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জমিগুলোর চাষাবাদের ক্ষমতা বাড়ানো আমাদের এক বিরাট কর্মযজ্ঞ হয়ে উঠেছে। এভাবে কাজ করার ফলে বাংলাদেশের প্রায় ২৫ শতাংশ জমি কিন্তু আমাদের এই ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারে চাষাবাদ হচ্ছে।

বীজ উৎপাদনের দিকে গেলেন কেন?

কৃষিজমির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘বীজ’। ভালো বীজ হলে ধানসহ যে কোনো ফসলই শক্তসামর্থ্য হবে, ভালো ফলন ফলবে। বীজ দুর্বল হলে দুর্বল সন্তানের মতো সেটি খারাপভাবে বাড়বে। বীজের ব্যবসাটি খুব কঠিন। দুই-তিন বছর পর পর আবহাওয়া এমন খারাপ হয় যে কৃষক ভালোভাবে ফসল ফলাতে পারেন না, নয়তো বীজ উৎপাদনের ক্ষতি হয়—এমন হতেই থাকে। সুতরাং এই ব্যবসায় দুই বছর লাভ হবে, এক বছর ক্ষতি হবে। এভাবেই চলে। এটি খুব লাভজনক ব্যবসা নয়; কিন্তু কৃষকের কাছে উন্নত মানের বীজ পৌঁছে দেওয়া অপরিহার্য। সে বেচারা এত কষ্ট করেও বীজের গুণাগুণের কারণে ফসল উৎপাদনে মার খান। অথচ বীজে কী গুণাগুণ আছে তিনি তা বাইরে থেকে দেখতে পান না, জানেন না। বীজের গুণাগুণ নির্ভর করে সারা বছর এটি কোথায় কিভাবে ছিল, কতটা গরমে, কতটা আর্দ্রতার মধ্যে ছিল ইত্যাদির ওপর। এসব ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ না করা হলে অঙ্কুরোদগমনের ক্ষমতা কমে যায়। আমরা বীজের এই গুণাবলিগুলো নিশ্চিত করেছি; তাই আমরা বীজের ব্যবসা করি। আমাদের রিসার্চ ল্যাবরেটরি আছে, সেখানে আমরা ‘আণবিক জীববিদ্যা’র মাধ্যমে বীজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হস্তান্তর করি। আমাদের নিজস্ব রেজিস্টার্ড সংকরায়ন বিজ্ঞানী আছেন। ফসল ফলানোর জন্য জমিতে যেসব রোগবালাই প্রতিরোধক স্প্রে দেওয়া প্রয়োজন সেগুলোও আমরা তৈরি করেছি। এভাবে বাংলাদেশের কৃষকদের দোরগোড়ায় তাঁদের প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী আমরা পৌঁছে দিতে চাই এবং কৃষককে তাঁদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে সাহায্য করতে চাই।

‘স্বপ্ন’ নামের আউটলেট কী এই কারণে করা?

কৃষকরা যখন ফসল উৎপাদন করেন, সবাই একসঙ্গে সেগুলো বাজারে বিক্রি করতে আসেন। ফলে আড়তদাররা সস্তায় এগুলো কিনে নেন এবং তাঁদের সুবিধা মতো আস্তে আস্তে বাজারে ছাড়েন। ফলে তিন-চার গুণ বেশি দামে ফসলগুলো বিক্রি হয়। এই ক্ষেত্রে আমরা কৃষকসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রেতারা যাতে তাঁদের ন্যায্যমূল্য ঠিকমতো পান, সেটি নিশ্চিত করতে চেয়েছি। ‘স্বপ্ন’ নামের নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র করেছি। সেখানে কাঁচাবাজারের পণ্যগুলো বিক্রি হয়। আমাদের ন্যায্যমূল্যের পণ্য বিক্রি করতে হয়, নয়তো পণ্যগুলো তো বিক্রি হবে না। আমাদের লাভের পরিমাণ কম থাকে, কিন্তু এই ব্যবসার ফলে কৃষকরা তাঁদের পণ্যের মূল্য ঠিকমতো পান। আসলে এসব কাজের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চেয়েছি। আমাদের মাধ্যমে এ দেশের কৃষি খাতে পণ্য উৎপাদন, বিক্রির পুরো প্রক্রিয়াটি গড়ে উঠছে। এ জন্য আমাদের আলাদা বিভাগ আছে। চেইন শপের খুচরা ব্যবসাই হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবসা। আমরাও সেই মডেলে করার চেষ্টা করেছি, যাতে এখানে আপনার প্রয়োজনীয় সব জিনিশই পান। ‘স্বপ্ন’র মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রায় ১৭৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে। কারণ মানুষের কেনার তো কোনো শেষ নেই। মানুষের কাছাকাছি স্থানে পণ্যগুলোকে এমনভাবে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি, যাতে কেনাকাটা করা ক্রেতা ও তাদের পরিবারের কাছে আনন্দদায়ক হয়। পণ্যগুলো নিরাপদ, মানের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়, প্রয়োজনে ফেরতও দিতে পারেন। আমাদের ৬০-৬৫টি ‘স্বপ্ন’ আছে। আস্তে আস্তে আরো বাড়বে। এ ছাড়া ভারতের গোদরেজের সঙ্গে যৌথভাবে মুরগি ও মাছের খাবার তৈরির ব্যবসা সঙ্গে করছি।

চায়ের ব্যবসায় নেমেছেন কেন?

বাংলাদেশের মানুষ চা পান করেন। এটি তাঁদের কাছে অপরিহার্য। সে জন্য আমরা ‘চা’ ব্যবসা করি। ভারতের টাটার অন্যতম কম্পানি ‘টেটলি’র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আমরা ‘টেটলি টি’ নামের চা বাজারে নিয়ে এসেছি। তবে আমাদের দেশে নতুন হলেও এটি বিশ্বের এক নম্বর ব্র্যান্ড। ভোগ্যপণ্য ব্যবহারকারীদের জন্য আমরা রান্নাঘরের ঝুড়ি তৈরি করছি। ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে আমরা লবণ উৎপাদনে গিয়েছি। যখন আমরা এই ব্যবসাটি শুরু করি, তখন কালো রঙের ধোয়া লবণ ছিল, আমরা পেপারাইজড, ফ্রি ফ্লোয়িং—লবণ তৈরি শুরু করলাম। এখানেও টাটা আমাদের সাহায্য করেছে। এখন আমরা নিজেরাই ‘এসিআই লবণ’ উৎপাদন করি। আমরাই প্রথম আয়োডিনযুক্ত, বায়ুশূন্য অবস্থায় স্থানান্তরিত করা, এক শ ভাগ খাঁটি লবণ বাজারে নিয়ে এসেছি। আগে যে লবণ খাওয়া হতো সেটির ৪০ ভাগ জৈব ছিল। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা মনে করি, দেশের জন্য এসিআই কিছু করতে পেরেছে। কেননা বাড়তি বয়সের ছেলে-মেয়েরা এই আয়োডিন না পেলে তাদের মেধা সৃষ্টি হয় না। অঙ্কের মাথার জন্য আয়োডিন লাগেই।

এসিআইয়ের বিশেষত্ব?

আইসিআইয়ের মতো করে ২৫ বছর ধরে আমি এসিআই লিমিটেডকে একই রকম উচ্চমানে চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা ক্রেতাদের দায়িত্ব নিই। যে পণ্যগুলো বিক্রি করি সেগুলোর কার্যক্ষমতা যেন খুব ভালো হয়, সে জন্য ভালো জায়গা থেকে উচ্চমানের কাঁচামাল আহরণ করি। কাঁচামাল ভালো জায়গা থেকে, ভালো মানের নিলে লাভের অঙ্ক কম হবে, কিন্তু পণ্যের মান তো খুব ভালো হবে। লাভ নয়, আমরা সব সময় মানের দিকে গিয়েছি। আমাদের ক্রয় করার সামর্থ্যের মধ্যে আছে, এমন ভালো কাঁচামাল সব সময় আহরণ করি। কখনোই আমরা আমাদের পণ্যের মানের ব্যাপারে আপস করিনি, সে জন্য কখনোই আমরা লাভের কথা ভাবিনি। আমরা বিশ্বাস করেছি—একটি প্রতিষ্ঠান যদি ক্রেতানির্ভর হয়, সেটির ওপর ক্রেতাদের যদি বিশ্বাস জন্মে, লাভ আসবেই। আমরা কম লাভ করে বাংলাদেশের ক্রেতাদের উচ্চমানের পণ্য সরবরাহ করেছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমার ব্যবসা তো এমন নয় যে কেউ আমাকে ধরিয়ে দিয়ে গেল বা এটি পৈতৃক সম্পত্তি; সেটির দায়দায়িত্ব তো অন্য রকম থাকে। এসিআই যে আমার হাতে এসেছে, আমি যে এই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব নিতে পেরেছি—সে তো আল্লাহর দান। আমার তো কিছুই করার ছিল না; প্রয়োজনীয় টাকাও আমার কাছে ছিল না। শুধু সময়মতো সেখানে হাজির ছিলাম, আমার কাজে প্রতি তাঁদের সন্তুষ্টি ছিল। কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা তো ব্রিটিশদের কাছে কিছুই নয়, কিন্তু আমার কাছে অনেক কিছু। ফলে সেটিকে লালন-পালন করে আমি এই পর্যায়ে এনেছি। আমার সহকর্মীদের সহযোগিতায় একে আরো বিস্তৃত করেছি। সেই সাড়ে ৩০০ কর্মীর প্রতিষ্ঠান অনেক বড় হয়েছে। এখন আমাদের সাড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার কর্মী আছেন। এই যে কৃতিত্বের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানকে বিকশিত করতে পেরেছি, আমাদের ওপর ক্রেতাসাধারণের পূর্ণ আস্থা জন্মেছে, তার একমাত্র কারণ নিয়মমাফিক, ন্যায়নিষ্ঠতার সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠান চালিয়েছি। সব সময়ই উন্নতির চেষ্টা করেছি। যেকোনো কাজেই নিয়মিত উন্নয়নের চেষ্টা করলে কারো থেকে পিছিয়ে পড়বেন না। সময়ের সঙ্গে এসিআই তাল মিলিয়ে চলেছে। যত উন্নত প্রযুক্তিই এসেছে, সেটির সঙ্গে নিজেদের সংযোগ ঘটিয়েছি, আমাদের কাজে সেটির প্রয়োগ করে পণ্যগুলোর মানোন্নয়ন করেছি। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে সব সময় আমি স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছি। এসিআইকে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া, কোনো অন্যায়ের সঙ্গে সংযুক্ত হতে দিইনি। এটিই আমাদের নীতি। ফলে আয়কর প্রদানে আমাদের অত্যন্ত সুনাম আছে। এই কাজগুলো করায় ক্রেতা থেকে সমাজ—সব মহলেই আমাদের সুনাম হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করেন, এসিআই মানেই সৎ কম্পানি। এসিআইয়ের পণ্য মানেই উচ্চমানের সেরা পণ্য। এই প্রতিষ্ঠানটি ন্যায়নীতির সঙ্গে পরিচালিত হয় এবং তারা পণ্য বিক্রি, সেটির মান ও আয়কর প্রদান—কোনো কিছুতেই ফাঁকি দেয় না, কোনো দিন দেবেও না। আমাদের নির্দিষ্ট নীতিমালা আছে, যেটি দেশ ও দশের জন্য উপকারী।

কিভাবে এসিআই পরিচালনা করেন

আমাদের বিজ্ঞাপন কম, আমরা লুকিয়ে থাকতে চাই। কারণ এ দেশে তো জানেনই, ব্যবসা করতে গেলে কত রকমের চাপ আসে; আমরা সেসব চাপ থেকে দূরে থাকতে চাই। আমরা মনে করি, এসিআইয়ের, আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। সে জন্য কর্ম সৃষ্টি করা আমাদের অন্যতম উদ্যোগ। আমরা যাঁদের কর্মী হিসেবে নির্বাচন করি, তাঁদের শুধু কাজ-ই দিই না; তাঁদের জীবনযাত্রার মান, দক্ষতা বাড়ানোতে উৎসাহিত করি। এসিআইতে কর্মীরা যা করতে চান, করতে পারেন। আমাদের অনেকেই পড়ালেখা করেন। বিবিএ করেছেন, তার পর থেকে আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। এমবিএ করে হয়তো তিনি থাকছেন, নয় চলে যাচ্ছেন, কিন্তু আমরা তো তাঁদের কাজ শেখার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। এসিআই যেন মেয়েদের জন্য খুব নিরাপদ থাকে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রেখেছি। এখানে তাঁরা কোনো ধরনের হয়রানি বোধ করেন না। ফলে তাঁরা আমাদের সঙ্গে এসে কাজ করতে চান। এসিআই তার সামাজিক দায়বদ্ধতা পূরণ করে চলেছে। আমরা এই সমাজের উন্নতি করতে চাই, আমাদের দ্বারাই এ দেশের প্রবৃদ্ধি হবে, হচ্ছে এবং আমরা সরকারের উদ্যোগগুলো যাতে আরেকটু ভালো হয় সে চেষ্টায় সহায়তা করব।

অনেকবার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ছিলেন।

ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃত্বদানের মাধ্যমে আমি আমার সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছি। এটি করার প্রয়োজন এ কারণেই বোধ করেছি, যে আমি সৎ হলেই হবে না, অন্য সবাইকেও সৎ হওয়ার জন্য, সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যাবসায়িক সমিতি, যেখানে এ দেশের ৮০ ভাগ করদাতা আছেন; স্কয়ার, বেক্সিমকোর মতো বড় বড় কম্পানিগুলো আছে, আমি সেই মেট্রোপলিটন চেম্বারের চার মেয়াদের প্রেসিডেন্ট ছিলাম। সেখানে আমরা সব সময়ই সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি—তাঁদের কী কী পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যবসায়ী সমাজ সত্ভাবে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারেন, তাঁদের ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো কিভাবে দূর করা সম্ভব হয়। কোনো সময়ই আমরা এমন কিছু বলিনি বা করিনি যেসব পদক্ষেপ বা আলোচনার মাধ্যমে কোনো একটি ক্ষুদ্রগোষ্ঠী বিশেষ সুবিধা পায়। সেখানে এ দেশের বড় বড় কম্পানি তো আমাদের সঙ্গেই আছে। সেখানে আমি যে নেতৃত্ব দিয়েছি; তাতে আমরা নিশ্চিত করেছি যে আমরা কারো পক্ষে কথা বলব না। এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনেও প্রতিনিধিত্ব করেছি, যাতে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিগুলো পূর্ণ হয়। তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয় এবং লেবার ল (শ্রম আইন) যেন উভয়পক্ষের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য হয়। উভয়পক্ষ এ কারণে বলছি—শ্রমিকরা খুব অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারেন, তাঁরা যদি বেআইনি কাজ করেন বা আইনমতো না চলেন, তাহলে কিন্তু প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন করা মুশকিল হবে, অনেক ক্ষতি হবে। ফলে আমাদের সব সময়ই প্রচেষ্টা ছিল, মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক ভালো রাখা। যেন আইনের শাসন উভয়পক্ষ মেনে চলেন, সে ব্যবস্থা করা। এখন বাংলাদেশে ধর্মঘট নেই বললেই চলে; অথচ আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে কারখানায় শ্রমিকরাই ধর্মঘট করতেন। আমরা তাঁদের বোঝাতে পেরেছি, যে আমরা তাঁদের ভালো চাই, তাঁদের উন্নতিই আমাদের কাম্য। তাঁদের শোষণ করার জন্য আমরা ব্যবসা করি না।

ব্যক্তিগত জীবন?

১৯৬৪ সালে বিয়ে করেছি। স্ত্রী নাজমা দৌলা, পেশায় গৃহিণী। আমাদের তিনটি ছেলে-মেয়ে। বড় ছেলে ড. আরিফ দৌলা ইউসিএল (ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস) থেকে গণিতে পিএইচডি। অঙ্কে পিএইচডি করেছে, কিন্তু সে যেকোনো বিষয়ে যেকোনো মানুষকে পড়াতে পারে—এতটাই দক্ষ। সত্যিই সে একজন অত্যন্ত মেধাবী মানুষ। সে শিক্ষকতা করলে আমেরিকার উপকার হতো; সে তো সেখানে প্রফেসর ছিল। তাকে বাংলাদেশে আনতে আমার অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। সে বলেছে কেন আসবে, কী সুবিধা হবে? সে এখানে এসে কী করতে পারবে? ২০০৭ সালে বিদেশ থেকে ফেরার পর থেকে সে এসিআইতে আছে। পাঁচ বছর কনসালট্যান্ট বা উপদেষ্টা হিসেবে শিখেছে, পরের সময়টুকুতে হাল ধরেছে। সে এসিআই লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আমি চেয়ারম্যান। আমাদের বেশির ভাগ কাজই সে-ই করে, আমি কন্ট্রোল করি। সে অঙ্কের মতো করে, যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে ব্যবসাটি চালায়। আমার মেয়ে সুস্মিতা আনিস আমেরিকা থেকে গ্রাফিকস ডিজাইনে স্নাতক। দেশে ফিরে তিন বছর আমাদের কনসালট্যান্ট ছিল। সে ‘এসিআই ফর্মুলেশনস’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এটি কৃষিভিত্তিক রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে, এসিআই অ্যারোসল ও কয়েল তৈরি করে, এখন রং তৈরি করছে। আমার ছোট ছেলেটি ১২ বছর বয়সে দুর্ঘটনায় মারা গেছে। ওর নাম আশরাফ দৌলা।

জীবনে এত উন্নতি কিভাবে করেছেন?

কাজ, কাজ ও কাজ। আমি বিশ্বাস করেছি, কাজের মাধ্যমেই উন্নয়ন ও উন্নতি ঘটানো সম্ভব। মা-বাবার কাছ থেকে যা শিখেছি; সন্তানদেরও সেটিই শিখিয়েছি—ইচ্ছা করলে কাজকে ভালোবেসে সেটির মধ্যে মানুষ তাঁর বিনোদন খুঁজে পেতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো যে কাজটি করছেন, সেটি বিতৃষ্ণার সঙ্গে করছেন, না আগ্রহ নিয়ে করছেন? আগ্রহ নিয়ে করলে তো কাজ তাঁর জন্য আনন্দ। তাই চিরজীবন আমি কাজ করেছি। খেলা দেখতে গেলাম কিংবা অন্য কোথাও বেড়ালাম, আমার তো সেই সময়টুকুই নেই। কাজকে আমি দায়িত্ব মনে করেছি। আমি জানি কাজটি কীভাবে করতে হবে। ফলে এই কাজ আমি যত করব, ততই ভালো হবে। সুতরাং অন্য কোনো দিকে দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন আমার নেই। বাসায়ও আমি কাজ নিয়ে যাই। ছুটির দিনেও কাজ করি।