বিজনেস ডিরেক্টর, এসিআই ফার্টিলাইজারের
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষি উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ বশির আহমেদ। এই যুদ্ধ দেশের খাদ্য পরিস্থিতিতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সার ব্যবসার সাথে জড়িত দেশের অন্যতম বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এসিআই’র এই কর্মকর্তা। বশির আহমেদ এসিআই এ দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে কাজ করছেন। বর্তমানে এসিআই ফার্টিলাইজারের বিজনেস ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এই কৃষিবিদ। বিজনেস নিউজ পোর্টাল দেশ সমাচারকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন কৃষিখাতর আগামী দিনের সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
দেশ সমাচার : চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে সারের বাজারে কেমন প্রভাব পড়বে?
বশির আহমেদ: রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশই বিশ্বের অন্যতম খাদ্য ও কৃষিজ পণ্য উৎপাদনকারী। রাশিয়াতে পটাশ ও ফসফেটের মতো সার তৈরির প্রধান উপাদানগুলোও বিপুল পরিমাণে উৎপাদিত হয়। দেশের মিউরিয়েট অব পটাশ (এমওপি) সারের চাহিদা প্রায় সাড়ে সাত লাখ টন। মূলত রাশিয়া, বেলারুশ ও কানাডা—এ তিনটি দেশ থেকে আমদানি হয় এমওপি। তবে এর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই আসে শুধু রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। চলমান ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এরই মধ্যে অর্থ লেনদেনে জটিলতা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি দেশ দুটি থেকে প্রাথমিকভাবে রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ফলে এমওপি সারের জোগান নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। চলমান সংকটে সরকারের ভর্তুকির পরিমান অনেক বেড়ে যাবে। কৃষিতে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি ২৮ হাজার কোটি টাকা হয়ে যাচ্ছে। এটি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকায় চলে যেতে পারে।
দেশ সমাচার : সারের সোার্স পয়েন্ট সংকটে আন্তর্যাতিক বাজারে কেমন প্রভাব পড়বে?
বশির আহমেদ: ৩০০ ডলারের ইউরিয়া বর্তমানে ১০০০ হাজার ডলার, এটি ১ হাজার ৫ শত ডলার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। মূলত বেসরকারিভাবে এসওপি আমদানি করা হয়। এর মূল সোর্স হলো এমওপি। যেহেতু সিংহভাগ রাশিয়া এবং ইউক্রেন সোর্স পয়েন্ট সেহেতু এসওপির মূল্য বেড়ে যাবে।
দেশ সমাচার : তেলের দাম বৃদ্ধিতে কৃষিতে কেমন প্রভাব পড়বে?
বশির আহমেদ : তেলের দাম বাড়ায় সামগ্রিমভাবে কৃষিতে প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে শিপিং কস্ট বেড়ে গেছে। এতে প্রতিটি পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। আর এই চাপ কৃষকদের উৎপাদন খরচে পড়বে। চলমান যুদ্ধের কারনে পুরো কৃষি অর্থনীতিতে চাপ আসবে।
দেশ সমাচার : যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে সারের সংকট কীভাবে মোকাবেলা করা যায়?
বশির আহমেদ : সারে প্রচুর ভর্তুকির কারনে কৃষকরাও প্রচুর সার ব্যবহার করে। এখানে সরকারের বিষয়টা ভেবে দেখা দরকার। জমিতে যে পরিমান নাইট্রোজেন কৃষকরা ব্যবহার করছে তার প্রয়োজনীয়তা দেখতে হবে। অর্গানিক সারের ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী সার ব্যবহার করলে সার আমদানি কমানো সম্ভব বলে মনে করি। কৃষকরা যাতে যাস্টিফাইড ওয়েতে সার ব্যবহার করে সেই বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
দেশ সমাচার : সারের আমদানি নির্ভরতা কমাতে কী করা দরকার?
বশির আহমেদ : আমাদের উৎপাদিত এনপিকেএস সার আছে। ব্যালেন্সড সার বলে এটি কম বা বেশি দেয়ার সুযোগ নেই। এসব সার ব্যবহার করলে অন্য সার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। এছাড়া নতুন প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। এনপিকেএস কম্বো ব্যবহারে ইউরিয়ার পরিমান ২৫ শতাংশ কম লাগে। এতে করে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ইউরিয়া সারের সাশ্রয় করা সম্ভব, অর্থাৎ ৫ হাজার কোটি টাকার মতো ভর্তুকি কমে যাবে।
দেশ সমাচার : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
বশির আহমেদ : দেশ সমাচারকেও ধন্যবাদ।