চেয়ারম্যান, অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (এসিআই) লিমিটেড
বহুজাতিক কোম্পানির নির্বাহী থেকে হয়েছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ উদ্যোক্তা। কখন কীভাবে ব্যবসায় যুক্ত হলেন?
এম আনিস উদ দৌলা :উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুটা গল্পের মতো। আগে বহুজাতিক কোম্পানির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবেই কর্মরত ছিলাম। এসিআই শুরুর আগে ব্রিটিশ অক্সিজেন গ্রুপে পাকিস্তান, কেনিয়া ও বাংলাদেশে দীর্ঘ ২৭ বছর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করি। এর মধ্যে বাংলাদেশ অক্সিজেন লিমিটেডে ১২ বছর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে আইসিআইয়ের তিনটি কোম্পানির গ্রুপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক হই, যে কোম্পানিটি ১৯২৫ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রসায়ন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৮ সালে জীবন রক্ষাকারী ওষুধসামগ্রী উৎপাদনের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জে কারখানা নির্মাণ শুরু করে, বাংলাদেশে যার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা ১৯৭৩ সালে। তবে কোম্পানিটি এ দেশে লোকসান করছিল। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হলে অল্প সময়ের মধ্যে একে লাভজনক করে তুলি। এরপর প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা আমার কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় আইসিআই বোর্ড।
তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে আইসিআই লিমিটেড স্থানীয় ব্যবস্থাপনার কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (এসিআই) লিমিটেড নামকরণ নিয়ে যাত্রা করে। তবে আইসিআই বহুজাতিক কোম্পানি হলেও বাংলাদেশে এর কার্যক্রমে তেমন চমক ছিল না। কোম্পানিটিকে লাভজনক করতে আমাকে আনা হয়েছিল। এক্ষেত্রে আমি সফল হয়েছি। তবে সময় লেগেছিল চার বছর। পঞ্চম বছরে এসে কোম্পানিটি সিদ্ধান্ত নিল, ছোট দেশে তারা আর কার্যক্রম পরিচালনা করবে না। ১৯৯২ সালে তারা প্রস্তাব দিল কোম্পানিটি আমি কিনে নেব কিনা। বললাম, আমার তো এত অর্থ নেই। তারা বলল, অর্থ লাগবে না। আপনি আয় অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করবেন। তবে আমাকে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে এবং আইসিআইয়ের সুনাম অটুট রাখতে হবে।
তাদের শর্তাবলি আমার ধারণার সঙ্গে মিলে গেল। কর্মীরা যদি সুখী না হন বা কোম্পানির সমৃদ্ধিতে অংশ নিতে না পারেন, তাহলে কাজের পরিবেশ সুন্দর হয় না। অন্যদিকে আমার প্যাশনও ছিল পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করা। আইসিআই ছিল মানসম্পন্ন কোম্পানি। ব্যবসায় যদি সততা ও কাউকে বঞ্চিত করার প্রবণতা না থাকে, তাহলে আপনি অবশ্যই মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে সক্ষম হবেন এবং ব্যবসাটি লাভজনক হবে। কোম্পানিটি আমি পেয়েছি ঘটনাক্রমে। তারা বাংলাদেশে ব্যবসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে কর্মী থেকে আমি পরিণত হলাম এর স্বত্বাধিকারীতে। এমন সুযোগ আরও অনেকে পেতে পারতেন। তবে দেখার বিষয় হলো এক. যে উদ্দেশ্যে আমি কোম্পানিটি নিয়েছিলাম, তা সমুন্নত রাখতে পেরেছি কিনা। দুই. সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে টিকে থাকা।এসব বিষয়ে আমি সবসময় ছিলাম সচেতন।
উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার শুরুর ব্যবসা কী কী?
এম আনিস উদ দৌলা : শুরুতে ঔষধ ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের রাসায়নিক তৈরি নিয়ে যাত্রা করলেও এখন এসিআই একটি পরিপূর্ণ গ্রুপ হিসেবে পরিচালনা করা হচ্ছে। ওষুধ, ভোগ্যপণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত ও প্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছি। ফার্মাসিউটিক্যালস কিংবা এগ্রোকেমিক্যালসে ব্যবসা সীমাবদ্ধ রাখিনি। কৃষকের প্রচুর চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে ফার্টিলাইজারে বিনিয়োগ করি। এ ছাড়া মাটির পুষ্টিরক্ষা, এগ্রোনোমিক প্র্যাকটিস ট্রেনিং, সময়মতো ফসল বাজারজাতকরণ নানামুখী চাহিদা রয়েছে। এরপর বাজার সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসাকে নানামুখী খাতে সম্প্রসারণ করি। সবসময়ই পণ্যের গুণগত মান বজায় রেখে ক্রেতা সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিয়েছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা। সবসময়ই আমাদের ভাবনাচিন্তায় এটি ছিল এবং সেখান থেকে এসিআই সামান্যতম বিচ্যুত হয়নি।
চেয়ারম্যান হিসেবে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এম আনিস উদ দৌলা : এসিআই শুরুর দিকে মূলত রাসায়নিক ও ওষুধনির্ভর ছিল। সেগুলো সফল ব্যবসা। এখন ব্যবসাকে নানামুখী খাতে সম্প্রসারণ করছি। আর তা করছি পাঁচটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে। পণ্যের মান, গ্রাহককেন্দ্রিকতা, সততা, স্বচ্ছতা, ক্রমাগত উন্নতি ও উদ্ভাবন। বর্তমানে ওষুধ খাতে আমরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সমর্থ হয়েছি। এ পর্যন্ত ৫০০টিরও বেশি ওষুধ বাজারজাত করেছে এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস। তাছাড়া বাংলাদেশে আইএসও ৯০০১ সনদপ্রাপ্ত প্রথম প্রতিষ্ঠান আমরা। দেশের ওষুধের চাহিদা মেটানোর পরও শ্রীলংকা, ইয়েমেন, মিয়ানমার, ভিয়েতনামসহ মোট ৩৫টি দেশে রপ্তানি করছি। পাশাপাশি এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাজার তৈরিরও চেষ্টা চালাচ্ছি। কনজিউমার ব্র্যান্ড হিসেবে এসিআইয়ের কয়েকটি পণ্য সুনাম কুড়িয়েছে। এছাড়া গৃহস্থালিতে প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী জনপ্রিয় হচ্ছে। অন্যদিকে কৃষিপ্রধান দেশের কৃষকদের চাষাবাদ প্রক্রিয়া আরও সহজ করে তোলা প্রতিষ্ঠানটির এগ্রোবিজনেস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
শস্য সুরক্ষায় কীটনাশক তৈরি, উন্নতমানের সার, বিভিন্ন কৃষি মেশিনারি সরবরাহ করে থাকে এ প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি পশুস্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন, ওষুধ ইত্যাদিও বাজারজাত করছে। উন্নতমানের বীজ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ২০০৮ সালে এসিআই পুরোপুরি এ ব্যবসায় নামে। অন্যদিকে ক্রেতাদের পূর্ণ সন্তুষ্টি রয়েছে আমাদের রিটেইল চেইন ‘স্বপ্ন’-এর ওপর। স্বপ্ন থেকে পণ্য বিক্রি বাড়ছে, যার অর্থ ক্রেতাদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।
সব মিলিয়ে উচ্চপ্রযুক্তি ও ক্রেতা সন্তুষ্টি রক্ষায় উদ্যোক্তা হিসেবে সবসময়ই চেষ্টা করেছি। সুনিয়ন্ত্রিত পরিকল্পনা এবং উন্নতমানের কারণে এসিআইয়ের তৈরিকৃত অধিকাংশ পণ্যই আজ দেশের বাজারে জনপ্রিয়। যেটি ধরে রাখতে আজীবন চেষ্টা করে যাব।
সম্ভাবনাময় ব্যবসা হিসেবে কোন খাতে জোর দিচ্ছেন?
এম আনিস উদ দৌলা :কৃষিতে কাজ শুরুর পর দেখলাম, একই কৃষকের কাছে যেতে হচ্ছে সার, বীজ ও এগ্রোকেমিক্যালসের জন্য। তখন ভাবলাম, আমরা তো কৃষির সবকিছুই বুঝি। আমরা কেন তিনটিই একসঙ্গে দিতে পারব না? আমরা কৃষির সমন্বিতকরণের ব্যবস্থা নিলাম। জমি চাষের জন্য ট্রাক্টর বিক্রি শুরু করলাম। এসিআই মোটরস সেসব বিক্রি করে। চীন ও ভারত থেকে আমদানি করে এগুলো বাজারজাত করছি আমরা। তাতে কৃষকের চাহিদা ভালোই পূরণ হচ্ছে। এগুলো কিনে গ্রামের কেউ কেউ স্বাবলম্বীও হচ্ছেন। বেকাররা কৃষি যন্ত্রপাতি কিনে ভাড়া দিচ্ছেন কৃষককে। তাতে লাভ হচ্ছে দুজনারই। বেকারের জীবিকা হচ্ছে, অন্যদিকে স্বল্প সময়ে জমি চাষ করতে পারছেন কৃষক। সারা দেশে আমাদের ১২টি সার্ভিস সেন্টার আছে। এর মাধ্যমে সার্ভিস অরিয়েন্টেড ব্যবসাও করতে পারছি আমরা। এসবই আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত। এগুলো আমরা কাজে লাগাতে পারব অন্যত্রও। এভাবে সমন্বিতকরণের কাজটি করলাম। এখন ধান ও সবজির হাইব্রিড বীজ উৎপাদন করছে এসিআই। সর্বশেষ ভোগ্যপণ্য বিপণনে গেলাম।
আমাদের দেশে আগে লবণ ছিল কাদাযুক্ত। আমরা সেটিকে ফিল্টার করে তাতে সঠিক মাত্রায় আয়োডিন দিয়ে প্রথম পিওর সল্ট বাজারজাত করলাম। এটা আমাদের গৌরবও বটে। এরপর ভাবলাম গৃহিণীদের জন্য কিচেন বাস্কেটের সব প্রয়োজন মেটাব। আটা-ময়দা তৈরি শুরু করলাম। প্রতিদিন ৩০০ টন প্যাকেটজাত আটা উৎপাদন করছি। আমাদের কারখানা পরিপূর্ণ ক্যাপাসিটি অনুযায়ী চলে। এটা হয়েছে কেবল আমাদের ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের আস্থার কারণে। এরপর চিনি, সয়াবিন ও সরিষার তেল, গুঁড়া মসলা বিক্রি শুরু করে এসিআই।
কীভাবে মানুষের কেনাকাটার মান উন্নয়ন করা যায়, তাও চিন্তায় ছিল আমাদের। মানুষ কাঁচাবাজারে যাবে নাকি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মানসম্পন্ন পণ্য কিনবে? আমরা মধ্যম আকারের আউটলেট বানালাম। এ কনসেপ্টে আমরা প্রায় ৪৫টি আউটলেট করেছি। এগুলোর সিংহভাগই মূলত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে। এখন আমরা চেইন রিটেইলিংয়ের দক্ষতা বাড়াচ্ছি। বাংলাদেশের মধ্যবিত্তশ্রেণির মাঝে যেসব পরিবারের সদস্য বিদেশে থাকেন, তারা আর্থিক দিক থেকে বেশ সচ্ছল। তারা সাধারণত বিদ্যমান কাঁচাবাজারে যেতে অনিচ্ছুক। তাদের জন্য স্বপ্নে বাজার করার সুযোগ করে দেয়া হলো। এটা ভালোই চলছে। ধীরে ধীরে পণ্যের সংখ্যা ও আউটলেট বাড়াচ্ছি। আমরা প্লাস্টিক প্যাকেজিং উৎপাদন ও মার্কেটিং করি। একটা প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি আমাদের আছে। এ দেশের ছোট-বড় বহু কোম্পানিকে প্লাস্টিক মোড়ক সরবরাহ করি। খাবারের মধ্যে আচার, চকোলেট প্রভৃতি তৈরি করছি। এগুলোকে আমরা বলি ফান ব্র্যান্ড। এ ছাড়া পোলট্রি ব্যবসা আছে গোদরেজের সঙ্গে। এটি করা হয়েছে যৌথ উদ্যোগে। টেটলির সঙ্গে আমাদের চায়ের ব্যবসা রয়েছে। ডাবরের সঙ্গেও যৌথ উদ্যোগ রয়েছে আমাদের। আরও কিছু যৌথ উদ্যোগে ব্যবসা করার ইচ্ছা রয়েছে। বিশ্বের এক নম্বর পেইন্ট ব্র্যান্ড এক্সো নোবেলের সঙ্গেও আমরা চুক্তি সম্পাদন করেছি।
ওষুধ ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতের মধ্যে কোনটিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন?
এম আনিস উদ দৌলা :ওষুধ খাতে এখনো আমাদের বিনিয়োগ বেশি। এ ব্যবসা খুবই লাভজনক ও সম্প্রসারণশীল। রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি স্থিতিশীল ব্যবসা। আর ভলিউমের দিক থেকে দেখলে বলব, রিটেইল চেইনের কথা। এটা বিরাট ব্যবসা, অনেক সম্ভাবনা রয়েছে এ খাতে।
তবে কোনো ব্যবসাই সহজ নয়। মাঠ ফাঁকা নয়, সবখানেই প্রতিযোগিতা রয়েছে। টিকে থাকতে হলে তুলনামূলক সুবিধা ব্যবহার করে সুযোগ তৈরি করে নিতে হবে। যে ব্যবসাই হোক, একটি অবস্থানে যেতে হলে অন্যদের সঙ্গে পার্থক্য তৈরি করতে হবে, সেটি হতে পারে মূল্যবোধের মাধ্যমে। আমরা মূলবোধকে প্রাধান্য দিই। মানুষ যদি বিশুদ্ধতা অথবা সঠিক দাম নির্ধারণের কারণে আমাদের ব্র্যান্ডকে চিহ্নিত করতে পারে, তাহলে ব্যবসায় সফলতা আসবে। আমরা যা কিছু করি, মানুষ সেটাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে। এটা একটা বড় পাওয়া। অন্যদের এটি সৃষ্টি করতে অনেক সময় লাগবে। যে কোনো পণ্য আমি বাজারে দিই না কেন, মানুষ সেটাকে স্বভাবতই গ্রহণ করে। এটা তারা করে এসিআই কোম্পানির প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার কারণে। এজন্যই ফার্মাসিউটিক্যাল সামগ্রী বাজারজাতকরণে আমাদের প্রতিষ্ঠান শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে। কনজিউমার দ্রব্যগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি পণ্য প্রথম স্থানে রয়েছে। এর মধ্যে লবণ, আটা, মশার কয়েল, অ্যারোসল ও স্যাভলন বাজারজাতে আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রথম সারিতে। এর পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে গুণগত মান বজায় রাখা। এছাড়া যৌথ বিনিয়োগে উৎপাদন করা কিছু পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি। এর মধ্যে বিখ্যাত টেটলি চা, ডাবরের পণ্যসামগ্রী।
ব্র্যান্ডিং বা প্রচারণায় আপনাদের তেমন জোর নেই কেন?
এম আনিস উদ দৌলা : প্রচারণা করা হয় দুই উদ্দেশ্যে, ক্রেতা ও জনসাধারণের জন্য। এটা অনেক সময় অনেকের ইগো স্যাটিসফ্যাকশনের জন্য করা হয়। এটি কতটা ব্যয়সাশ্রয়ী, তা দেখা দরকার। আমরা সেভাবেই মিডিয়া বাছাই করি। ব্র্যান্ডিং করি পণ্যের গুণগত মান, কার্যকারিতা এবং সাশ্রয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে। মূল লক্ষ্য থাকে, যাতে ক্রেতার কাছে খবরটি পৌঁছায়। তারা যাতে এর সুফল পান। হয়তো সেজন্যই আমরা বিজ্ঞাপনের দিকে অতটা জোর দিইনি। ন্যায্যমূল্যে যদি মানসম্পন্ন পণ্য দিতে পারি, তাহলে আমাদের থামানো অসম্ভব। তাই আমরা যখন কোনো পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করি, তখন অন্যরা সচেতন হয়ে যায়।
পণ্য বাজারজাতকরণে দেশ নাকি রপ্তানি বাজারকে প্রাধান্য দিচ্ছেন?
এম আনিস উদ দৌলা :দেশে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের বিরাট বাজার রয়েছে। পণ্য বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে আমরা স্থানীয় বাজারের ওপর নজরও দিয়েছি। তবে স্বীকার করছি, রপ্তানির দিকে আরও নজর দেয়া উচিত ছিল। তবে এসিআই আগে দেশের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে চায়। এর পরই কেবল বড় ধরনের রপ্তানিতে যেতে চায়। দেশের চাহিদা পূরণই আমাদের প্রাথমিক দায়িত্ব বলে মনে করি। এ ছাড়া কৃষিকে সহায়তা করাও আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। তবে ভোগ্যপণ্যসহ ৩৫টি দেশে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এর বাজার সম্প্রসারণে সময় লাগে। চিকিৎসকদের অভ্যস্ত, পণ্যের নাম পরিচিতি এবং একই সঙ্গে বিশ্বস্ততা অর্জনের পরই বাজার গড়ে ওঠে। আমরা এ লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের পাশাপাশি কিছু এগ্রোকেমিক্যালস মিয়ানমারে রপ্তানি হচ্ছে। সেখানে আমাদের এজেন্ট রয়েছে। তারা আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য ও এগ্রোকেমিক্যালস বিক্রি করে। তারা বীজ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। রপ্তানির অনেক সুযোগ রয়েছে। সেগুলো আমরা এখনো সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারিনি।
এজন্যই স্থানীয় বাজারের ওপর গুরুত্ব দিই। কারণ আমরা যে ভালো পণ্য উৎপাদন করি, সেটা আগে দেশের মানুষকেই দিতে চাই। দেশে কোম্পানির সুনাম ছড়িয়ে পড়ুক, সেটিই আমাদের পুরস্কার। রপ্তানি হয়তো লাভজনক, কিন্তু সেদিকে আমরা খুব একটা নজর দিইনি এখনো। সব দিকে একসঙ্গে সমান নজর দেয়া সম্ভবও নয়।
শুরুর সময় ও এখনকার ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতার মধ্যে কী পার্থক্য লক্ষ্য করছেন?
এম আনিস উদ দৌলা : একজন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হিসেবে সবসময়ই অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। নানা ধরনের নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই ব্যবসা করতে হয়। চ্যালেঞ্জ কোনো সময়ই এক রকম থাকে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিবর্তন হয়। এখনকার প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো জ্বালানি জোগাড়, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা, উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টেকসই ব্যবস্থা প্রবর্তন প্রভৃতি। এক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর ধারাবাহিকতা রক্ষাও জরুরি। বিদ্যুৎ-গ্যাস না থাকলে ডিজেল বা ফার্নেস অয়েল দিয়ে পণ্য উৎপাদন করতে হয়, এতে খরচ পড়ে বেশি। কিন্তু উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে সে খরচ উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীকে বহন করতে হয়। বাজারে পণ্য সরবরাহে বিঘœ না ঘটে, সেদিকেই লক্ষ্য থাকে তাদের। সুনাম ধরে রাখতে লাভ-লোকসানের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে অনেক সময় উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এটি করতে হয়। আগে রেগুলেটরি চ্যালেঞ্জ ছিল। এখন সেসব কমে গেছে। বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো প্রতিযোগিতা। এখন আমাদের ব্যবসাটা ঠিক চ্যালেঞ্জের জায়গায় এসেছে। আগে লাইসেন্স পেয়েই বাজার যাচাই না করেই পণ্য আমদানি করা যেত। কারণ সবই বিক্রি হয়ে যেত। এখন সে অবস্থা নেই। এখন পণ্য আনতেও অনুমতি নিতে হয়। আমদানি করা পণ্য অবিক্রীতও থেকে যায় অনেক সময়, দাম কমে যাওয়া ও নষ্ট হওয়ার শঙ্কাও থাকে। বড় চ্যালেঞ্জ হলো, ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে প্রতিনিয়ত ভ্যালু অ্যাড করে যেতে হবে। যে কোম্পানি যত বেশি ভ্যালু অ্যাড করতে পারবে, বাজারে সে তত এগিয়ে যাবে।
পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা প্রসঙ্গে আপনার মূল্যায়ন কী?
এম আনিস উদ দৌলা : অবশ্যই তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু দেখবেন, মাঝে মধ্যে তারা পক্ষপাতিত্ব করে এবং তাদের যে কর্মকাণ্ড রয়েছে, তাতে গুণগতমান পুরোপুরি নিশ্চিত হয় না। যারা গুণগত মান সঠিকভাবে মেনে চলে না, সরকারি সংস্থাগুলো তাদের অনেকের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। কারণ তারা সরকারি সংস্থাগুলোকে ‘ম্যানেজ’ করে, আমরা তা করি না। বাগ্বিতণ্ডা হলে অনেক সময় তারা অযৌক্তিকভাবে আমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু বলতে পারি, পণ্যে গুণগতমান ক্ষুণœ হয় এমন কিছু আমরা কখনই করি না।
মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান কারখানা পরিদর্শন করে পণ্য দেখে। তারা কিন্তু মান উন্নত করার চেষ্টা করে না। দুর্ভাগ্যবশত তারা পুলিশিং করে। প্রথম কোম্পানি হিসেবে আমরা আইএসও ৯০০১ ও আইএসও ১৪০০১ দুটি সার্টিফিকেট পেয়েছি। একটা পণ্যের মান ও অন্যটি পরিবেশের জন্য। কোয়ালিটির এটাই আমাদের গার্ডিয়ান। এ সিস্টেমই আমাদের সহায়তা করেছে কোনো কর্মী পণ্যের মানের ব্যাপারে ছাড় দেবেন না। আর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার আচরণও অনেক সময় অযৌক্তিক দেখা যায়। তবে আমরা তুষ্ট এটা ভেবে যে, যত ক্ষতিই হোক মানের ব্যাপারে আমরা কখনই ছাড় দিই না। প্রফিটের চেয়ে কোয়ালিটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
মানহীন কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত কিনা?
এম আনিস উদ দৌলা : অবশ্যই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। নিয়ন্ত্রণ দোকানে নয়, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সেখানে, যেখানে তাদের পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে আসে এক্সটর্শন করতে। ভেজাল ধরা যায় আমদানি পর্যায়ে ও ফ্যাক্টরিতে। এজন্য দোকানে আসার তো প্রয়োজন নেই।
তবে আশার কথা, আমাদের দেশের ক্রেতারা এখন যথেষ্ট সচেতন। পণ্যের মান সম্পর্কে তারা প্রতিনিয়ত যাচাই-বাছাই করছেন। তাছাড়া মানসম্পন্ন পণ্য বেশি দাম দিয়ে কিনতে রাজি আছেন তারা। এজন্য বড় কোম্পানিগুলো কোনো অসুবিধায় পড়েনি। পণ্যের মান ধরে রাখা খুবই ব্যয়বহুল ব্যাপার। সেটি আমরা ধরে রাখতে সচেষ্ট। প্রফিট কম হলেও আমাদের যে শক্তিশালী বিপণন ব্যবস্থা রয়েছে, সেটিই এগিয়ে নিয়ে যাবে।
কৃষিতে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে কীভাবে দেখেন?
এম আনিস উদ দৌলা : এ খাতে দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার চায় বেসরকারি খাত এগিয়ে আসুক। কিন্তু তাদের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা সামান্যই। এ ছাড়া বেসরকারি খাতকে এগিয়ে নিতে নীতি-সহায়তাও পর্যাপ্ত নয়। ফলে প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়ছেন দেশের উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া উদ্যোক্তা পর্যায়েও রয়েছে উদ্ভট কিছু সমস্যা। বর্তমানে উদ্যোক্তারা স্বল্প সময়ে লাভবান হতে চান। এজন্য কৃষককে বঞ্চিত করতে দেখা যায় তাদের। বাধ্য হয়ে কৃষকরা পণ্য বিক্রি করে লোকসানে পড়েন। ব্যবসায়ীরা এ সুযোগই নেন। কৃষিপণ্য বাজারজাত করায় মধ্যস্বত্বভোগীরা এখনো বড় বাধা। এ ব্যাপারে কিছু নিয়ম বা আইন করা উচিত। কৃষককে নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য করার ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হয়, যারা বিত্তশালী তারাই এটি পেয়ে থাকেন। এতে বাজারে প্রভাব পড়ে। তাই উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে কৃষকসহ সব পর্যায়েই সমন্বিত নীতি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার।
সর্বাগ্রে কৃষকদের পণ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা বাড়ানো উচিত। ফসল যখন ওঠে তখন পরবর্তী ফসলের জন্য কৃষকদের অর্থের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময় তাদেরকে কীভাবে সহায়তা করা যায়? সরকারিভাবে ফসল ক্রয় (গভর্নমেন্ট পার্চেজিং) মৌসুমের শুরুতেই হওয়া উচিত। এ ছাড়া সমসাময়িক চুক্তিভিত্তিক কৃষি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকদের ভালোমতো ইনপুট ও সহায়তা দিলে তারা ভালো রিটার্ন দেবেন। এটি উইন-উইন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।
ব্যবসায়ীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। অতিমুনাফা লাভের প্রবণতা পরিহার করতে হবে। কেননা, অতি মুনাফা লাভ করতে গেলে কৃষককে শোষণ করতে হয়। এজন্য কৃষকের যৌক্তিক দাম নিশ্চিতে ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এজন্য যদি নতুন কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়, আমরা তাতে সহযোগিতা করব। তাছাড়া কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে উদ্যোক্তাদের অবশ্যই ‘ইকোনমিকস অব স্কেল’ মেনে উৎপাদনে যেতে হবে। আর মান এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বদা ভোক্তা সন্তুষ্টি বজায় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করাই শ্রেয়।
কৃষি গবেষণায় কতুটুক জোর দিচ্ছেন?
এম আনিস উদ দৌলা : কৃষি খাতে উন্নতমানের বীজের জন্য আমাদের একটি আধুনিক গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে নতুন প্রজাতির বীজ উদ্ভাবন করেছি। গ্রীষ্মকালে টমেটো, বাঁধাকপি ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। হাইব্রিড সবজির ফলন বেশি হচ্ছে। সবজি বা ফসলের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের জন্য দেশেই অত্যাধুনিক গবেষণাগার রয়েছে। সেখানে ব্রিডিং ও কোয়ালিটি দেখা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে আমাদের গবেষণা হচ্ছে বগুড়ায়। সরকারের গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্লটে প্রায় ৮ একর জমিতে আমাদের বীজের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। যেগুলো টিকে যায় সেগুলোই আমরা বিক্রি করি। আমরা নতুন জাতের সবজি উদ্ভাবন করেছি। যেমন ছোটো জাতের মিষ্টি কুমড়া বের করেছি। বড় জাতের কুমড়ার ফালি কিনে আনা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আমাদের কুমড়াটি একবেলা খাওয়ার উপযুক্ত।
ব্যবসায় নৈতিকতা ধরে রাখতে করণীয় কী হতে পারে?
এম আনিস উদ দৌলা : নৈতিকতা বলে-কয়ে হয় না। নিজ থেকে তা অর্জন করতে হয়। বাংলাদেশে এটাই এক সমস্যা। অন্যকে উপদেশ দিতে ভালো লাগে, কিন্তু নিজে সেটি মানি না। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এমন চিত্র। এক্ষেত্রে নেতৃত্বে দুর্বলতার কারণেও ব্যবসায় ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া সংগঠন দিয়েও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এটি আসে ব্যবসা ও দৃষ্টান্ত থেকে। বাজারে নৈতিকতা ধরে রেখে আমি সফল হলে দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। কেবল ব্যবসার ক্ষেত্রে নয়, সমাজে অন্যান্য ক্ষেত্রে নৈতিকতার চর্চা প্রয়োজন। সবচেয়ে জরুরি রাজনীতির ক্ষেত্রে নৈতিকতার চর্চা। মনে রাখতে হবে সুনাম অর্জনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ?
এম আনিস উদ দৌলা : তরুণ নেতৃত্বকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এখন তারা যদি ঠিকমতো তৈরি না হয়, সেটি আমাদের ব্যর্থতা। আমাদেরও নেতৃত্বে আর ফিরে যাওয়ার পথ নেই। আমরা যখন নেতৃত্বে ছিলাম, তখন চেষ্টা করেছি যাতে কোনো ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ না হয়। সেটিই দৃষ্টান্ত হতে পারে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য। তাছাড়া সমাজের সবখানেই নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় হচ্ছে। সেখানে ব্যবসায়ী সমাজও এর বাইরে নয়। তাই এদিক সম্পর্কে নতুনদেরও সজাগ থাকতে হবে।
কয়েকটি বিষয় সবসময়ই বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসা শুরু করা উচিত। প্রথমত. কোনো পরিকল্পনাই স্বল্পমেয়াদে করা উচিত নয়। সবসময়ই ব্যবসার চিন্তা নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদে। এছাড়া পণ্যের মানের ব্যাপারে কোনো আপস করা চলবে না। মনে রাখতে হবে স্বল্প মেয়াদে হয়তো ভেজাল মিশিয়ে কিছু মুনাফা করা যায়, কিন্তু ব্যবসা বেশিদিন পরিচালনা সম্ভব হবে না। তাছাড়া তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে এমন মানসিকতাও থাকতে হবে। ভোক্তারাই সবচেয়ে বড় বিচারক, তারা বিশুদ্ধতাই বেছে নেন।