ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কনজ্যুমার ব্র্যান্ড, এসিআই লিমিটেড
বিদেশি ব্র্যান্ডের আগ্রাসনেও সুনিপুণ বিপণন কৌশল ও দক্ষতা দিয়ে তৈরি করেছেন অনেক ব্র্যান্ড। ১০০% হালাল সাবানের ধারণা আলোড়ন সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক মহলে। মার্কেটিং গুরু প্রফেসর ফিলিপ কটলারও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি এ দেশের বিপণন জগতের গুরু সৈয়দ আলমগীর। তাকে ‘ফিলিপ কটলার অব বাংলাদেশ’ হিসেবেও আখ্যা দেন অনেকে। আমাদের সময়ের কাছে তুলে ধরেছেন বিপণন ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক চিত্র। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রেজাউল রেজা
অর্থনীতিতে দেশের প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে ব্যক্তির ক্রয়ক্ষমতাও। একই সঙ্গে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা। অথচ দেশীয় বাজারের সিংহভাগ দখল করে আছে বিদেশি কোম্পানিগুলোর বাহারি পণ্য। উল্টো দিকে এই দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে আছে দেশি ব্র্যান্ডগুলো। প্রবৃদ্ধিশীল এ বাজারের নেতৃত্ব দিতে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে পণ্যের গুণগত মান ও উদ্ভাবনে আরও যতœশীল হতে হবে বলে মনে করেন সৈয়দ আলমগীর। তার মতেÑ কেউ জায়গা ছেড়ে দেয় না, জায়গা করে নিতে হয়। পণ্যের গুণগত মান, পণ্যের প্রতি ভোক্তার আস্থা ও নিত্যনতুন পণ্যের উদ্ভাবন দিয়ে জায়গা করে নিতে হবে বাজারে।
পণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে দেশীয় কোম্পানিগুলোতে কিছুট উদাসীনতা দেখা যায় বলে মন্তব্য করেন এই বিপণন জাদুকর। বললেন, ‘বাজারে পণ্য ছেড়ে দিচ্ছি, অথচ বাজার ও ক্রেতার ধরন কিংবা তারা মূলত কী চান, তা নিয়ে কোনো গবেষণা বা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করি না। মার্কেট স্ট্যাডি করি না। ক্রেতাদের নিড গ্যাপটা বুঝতে চেষ্টা করি না। অন্যদিকে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো গুণগত মানের থেকে শুধু বিপণন, নিত্যনতুন উদ্ভাবনী কৌশল ও সৃষ্টিশীল স্লোগান ব্যবহার করে এগিয়ে থাকছে বাজারে।’
অভ্যন্তরীণ বাজার নেতৃত্বে বিদেশি কোম্পনির বিপরীতে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে থাকার পরামর্শে আলমগীর বলেন, ‘আমার ক্রেতা সম্পর্কে আগে আমাকে খুব ভালো করে এবং খুব কাছ থেকে জানতে হবে। আগে জানতে হবে যে, আমার ক্রেতা কে এবং কেমন। তিনি আসলে কী চান এবং কী রকম চান। সেই মোতাবেক সঠিক পণ্যটা দিলে এবং গুণগত মান ঠিক থাকলে ক্রেতারা তা সাদরে গ্রহণ করবেন।'
বিপণন পেশা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। সে সঙ্গে আনন্দদায়কও বটে। যখন নিজের সৃষ্ট কোনো ব্র্যান্ড সফল হবে, দেশের আপামর ভোক্তা যখন আপনার দেয়া সামগ্রী হূষ্টচিত্তে গ্রহণ করবে, সে বিষয়গুলো আপনি যখন উপভোগ করবেন, তখন তার মূল্য অনেক বেশি।
‘১০০ শতাংশ হালাল সাবান’ ধারণার প্রবর্তক তার নিজ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি যখন অ্যারোমেটিক সাবান বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করছিলাম, তখন সাবানের বাজার পুরোটাই এককভাবে দখল করে রেখেছিল ইউনিলিভারের লাক্স। সেটাকে টপকে নতুন একটা সাবানকে আমার ক্রেতার কাছে উপস্থাপন করা ও গ্রহণযোগ্য করে তোলাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। অনেকের কাছে তো অসম্ভব চেষ্টা ছিল এটি। তখন আমি আমার ক্রেতাদের খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করি, তাদের প্রকৃতি অনুধাবন করি; এমনকি সাবান বানানোর উপকরণ ও পদ্ধতি সম্পর্কেও বিশদ তথ্য সংগ্রহ করি। এর মধ্য দিয়েই আমি আবিষ্কার করি যে, বিদেশি সাবানে বিভিন্ন পশুর চর্বি ব্যবহার করা হয়, যার বিপরীতে কেবল ভেজিটেবল ফ্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যাস! আমি সেটাকেই কাজে লাগাই এবং আমার পণ্যের স্লোগানেও জুড়ে দেই সেটাÑ শতভাগ হালাল সাবান! বাকিটা সবার জানা।’