চিফ বিজনেস অফিসার, এসিআই মোটরস
কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানি করে দীর্ঘদিন ধরে দেশে মোটরসাইকেল বাজারজাত করছে এসিআই মোটরস। গত বছর জাপানি ব্র্যান্ড ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের বাজারজাতের দায়িত্ব পায় তারা। বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের বাজারের সম্ভাবনা, উৎপাদন, চালকের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন এসিআই মোটরসের চিফ বিজনেস অফিসার সুব্রত রঞ্জন দাস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
প্রথম আলো: ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার কারণ কী?
সুব্রত রঞ্জন দাস: দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, রিপারের মতো কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানি করে বাজারজাত করে আসছে এসিআই। ওই জায়গায় আমরা যখন সফল হলাম, তখন চিন্তাভাবনা করলাম, ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে। আমরাই প্রথম এ দেশে ফুয়েল ইনজেকশন প্রযুক্তির মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছি। এ জন্য ইয়ামাহা মোটরসাইকেল পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি খরচ কম। মোটরসাইকেল ব্যবসায় আসার আরেকটি কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশে মোটরসাইকেল উৎপাদক হওয়ার সুযোগ আছে। মোটরসাইকেল উৎপাদকের কাছ থেকে যদি আমরা উৎপাদনের কলাকৌশল শিখতে পারি, সেটি ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারব।
প্রথম আলো: ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বিক্রিতে আপনাদের লক্ষ্যমাত্রা কী?
সুব্রত রঞ্জন দাস: গত বছর বাংলাদেশে মোট বিক্রীত মোটরসাইকেলের ৩ শতাংশ ছিল ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের। চলতি বছর আমরা সেটি ৫ শতাংশে নিয়ে যেতে চাই। সারা দেশে বর্তমানে ৩০টি ডিলার আছে। প্রতিটি ডিলারকে আমরা সার্ভিস সেন্টার (সেবাকেন্দ্র) হিসেবে গড়ে তুলেছি। এখানে ইয়ামাহা ডায়াগনস্টিক টুলস আছে। যার মাধ্যমে গ্রাহকেরা মোটরসাইকেল নিয়ে গেলে ল্যাপটপে দেখিয়ে দেবে কোথায় কোথায় সমস্যা আছে। যেটি দামি গাড়ির ওয়ার্কশপে থাকে। গ্রাহকদের এই সুবিধা ছয় মাস পর্যন্ত বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে প্রতি মাসে আমরা এক হাজারের বেশি মোটরসাইকেল বিক্রি করতে পারছি। অবশ্য মাসের ১৫ তারিখের পর আমাদের কাছে আর মোটরসাইকেল থাকে না। তবে চাহিদা থাকে। কারণ, ছয় মাস আগে ইয়ামাহাতে মোটরসাইকেলের ক্রয়াদেশ দিতে হয় আমাদের। হুট করে চাহিদাপত্র দিলেই মোটরসাইকেল পাওয়া যায় না।
প্রথম আলো: বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের বাজার কতটা সম্ভাবনাময়?
সুব্রত রঞ্জন দাস: দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ওপর মোটরসাইকেলের বাজার নির্ভরশীল। দুই-তিন বছর ধরে রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল। চলতি বছর ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। গত বছরও একই রকম প্রবৃদ্ধি ছিল। তবে পাশের দেশগুলোতে প্রতি হাজারে যতজনের মোটরসাইকেল, সেটির তুলনায় বাংলাদেশে অনেক কম। যেমন আমাদের দেশে ১৬১ জনে একজন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। ভারতে ২০ জনে ১ জন এবং ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় ৪ জনের ১ জন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। তাই বর্তমানে বাংলাদেশের ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি বলা যেতে পারে।
প্রথম আলো: এসিআই মোটরসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সুব্রত রঞ্জন দাস: ভবিষ্যতে দেশেই মোটরসাইকেল সংযোজন কারখানা করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা খুবই হাই স্পেসিফিকেশনের মোটরসাইকেল বিক্রি করি। এসব মোটরসাইকেলের জন্য খুচরা যন্ত্রপাতি সরবরাহের ভেন্ডর তৈরি হতেই ছয়-সাত বছর লেগে যায়। ইয়ামাহা যে তেলের ট্যাংক ব্যবহার করে, সেটি অনেক ব্র্যান্ডই নিয়ে থাকে। শুধু এই ট্যাংক বানাতেই ৪০০ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করে কারখানা করতে হয়। এটি ইয়ামাহা করে না, তাদের ভেন্ডরেরা করে থাকে। এখন আমাদের সরকার ভেন্ডরকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে ভেন্ডর উঠে আসতে হবে। আমাদের পরিকল্পনা আছে, নিজেরা না করলেও ইয়ামাহার সঙ্গে যৌথভাবে কারখানা হতে পারে।
প্রথম আলো: মোটরসাইকেল উৎপাদনে বাংলাদেশ পিছিয়ে কেন? প্রতিবন্ধকতা কোথায়?
সুব্রত রঞ্জন দাস: ভারতের হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল সবচেয়ে জনপ্রিয়। তারা প্রথমে শুরু করেছিল জাপানি ব্র্যান্ড হোন্ডার সঙ্গে। এখন তারা সফল। ফলে যৌথভাবে শুরু না করলে এগোনো খুবই কঠিন। সে জন্য বিদেশি কোম্পানি যাতে বাংলাদেশে আসতে পারে, সেটির ব্যবস্থা করতে হবে। মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলও করে দেওয়া যায়। তা ছাড়া মোটরসাইকেল উৎপাদন করার মতো বাংলাদেশের বাজার যথেষ্ট বড় নয়। দেশে বর্তমানে যে পরিমাণ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়, সেটি দ্বিগুণ হলে একটি মোটরসাইকেল উৎপাদক প্রতিষ্ঠান লাভজনক হতে পারবে। অন্যদিকে বেশির ভাগ ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশকে বর্ধিত বাজার হিসেবে নিয়েছে।
প্রথম আলো: মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণ কী? বাইক আরোহীদের হেলমেট ব্যবহারে কতটা সচেতন হওয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন ?
সুব্রত রঞ্জন দাস: মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বড় কারণ রাস্তার সমস্যা। যেমন যাত্রাবাড়ীর ফ্লাইওভারে এমনভাবে দুটি অংশ জোড়া দেওয়া হয়েছে, যেখানে চাকা পড়লেই দুর্ঘটনা ঘটছে। তা ছাড়া বাস ও ট্রাকচালকেরা মোটরসাইকেলকে কিছু মনেই করেন না। অনেক বাইকচালকের গতিপ্রেম আছে। সেটির জন্যও দুর্ঘটনা ঘটে। তবে হেলমেট থাকলে অনেক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচা যায়। হেলমেট ব্যবহারে সচেতনতার জন্য আমরা ‘ইউজ হ্যালমেট, রাইড সেফলি’ স্লোগান নিয়ে গত ২৬ মার্চ মোটরবাইক শোভাযাত্রা করেছি। এতে ১ হাজার ৩০০ বাইকার অংশ নিয়েছিলেন। এ ছাড়া এক হাজার মোটরসাইকেলের সঙ্গে হ্যালমেট বিনা মূল্যে দিয়েছি আমরা। সব বাইক আরোহীরই ভালো ব্র্যান্ডের হ্যালমেট কেনা উচিত। ৬০০-৭০০ টাকার নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার করা ঠিক নয়। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।