বিজনেস ডিরেক্টর, এসিআই ফার্টিলাইজার
দেশ সমাচার: করোনায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কৃষি নিয়ে এসিআইর নতুন কি ভাবনা?
বশির আহমেদ: কোভিড পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই এসিআই ভালো প্রস্তুতি থাকায় খুব একটা সংকটে পড়তে হয়নি আমাদের। নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কৃষকদের সবধরনের পোডাক্ট সরবরাহ করতে পারছি আমরা। কৃষিতে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে উৎপাদন বাড়ানো এবং মানুষের খরচ কমানো। সেখানে যদি খরচ কমে এবং উৎপাদন বাড়ে তাহলে মানুষ লাভবান হবে। আমাদের যে বীজ ডিপার্টমেন্ট আছে সেখান থেকে আমরা অনেক হাই টেকনোলজি হাইব্রিড সিডস কৃষকদেরকে দিচ্ছি। পাশাপাশি মাইক্রোনিট ক্রেজ হরমুজ, স্পেশাল ফার্টিলাইজার, জৈব সার এগুলো দিয়ে মাটির স্বাস্থ্য যেমন ভালো রাখছি, তেমনি ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছি। আমাদের লেবার সর্টেজ। সে কারণে মেকানাইজেশনের দিক থেকে একটা বড় উদ্যোগ রয়েছে। মেকানাইজেশনের কারণে মানুষের উৎপাদন খরচ কমে, সেকারণে আমরা সমস্ত হারভেস্টিং মেশিনারিজ, কালটিভেশন মেশিনারিজ, এডুকেশন মেশিনারিজ এই জিনিসগুলো আমরা কৃষকদেরকে দিচ্ছি। যাতে এগুলো ব্যবহার করে তাদের উৎপাদন খরচ কমে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়িলে তারা লাভবান হয়। সোজা কথা কৃষকদের লাভবান করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
দেশ সমাচার: এবারের বাজেটে কৃষিখাত কতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে?
বশির আহমেদ: কৃষি ইস্যুতে সরকারের বড় ভর্তুকিটা থাকে সারের ক্ষেত্রে। যন্ত্রাংশেও সরকার একটা বড় ভর্তুকি দিয়েছে। সরকারের এব্যাপারে সবচেয়ে বড় সাফল্য কোভিড-১৯ এর কারণে কৃষকরা যে ধান কাটতে পারছেন না, সেসময় কৃষকদের কম্বাইন্ড হারভেস্টার সরবরাহ করা। তাৎক্ষণিকভাবে এটা সরবরাহ করে কৃষকদের ধান ঘরে তোলার ক্ষেত্রে যে বড় ধরণের সহযোগিতা করেছে আমি মনে করি এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতা করেছে এসিআই। এসিআই মটরস সরকারকে হারভেস্টার সরবরাহ করেছে প্রায় দেড় হাজার। এটার কারণেই কৃষকরা খুব দ্রুত তাদের ধান ঘরে তুলতে পারছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এটি বড় একটি ভূমিকা পালন করেছে খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে। এছাড়াও সারের ক্ষেত্রে যে ভর্তুকিটা আছে এই ভর্তুকিটার কারণে কৃষকরা সহনীয় পর্যায়ে সারের দাম পাচ্ছে এবং কম দামে কিনতে পারছে। এটাও সরকারের একটা ভালো উদ্যোগ। আমি মনে করি এই সাবসিডিটা অব্যাহত আছে এবং ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সারে তারা আরও বেশি ভর্তুকি দিয়েছে। সরকারের ডিএপির পাশাপাশি আরও বেশি অন্যান্য আরও যে সারগুলো আছে, যে সারগুলো ডিএপির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এই সারগুলোকেও সমন্বয় করে ভবিষ্যতে ভর্তুকি দিয়ে রাখতে হবে সরকারকে। যাতে সারগুলো ব্যালেন্স আকারে মাঠে ব্যবহার যায়। শুধু ডিএপিতে দুইটা উপাদান থাকে। অন্যান্য সারে অন্যান্য উপাদান থাকে। সুতরাং আমি মনে করি ডিএপির পাশাপাশি যে মিশ্র সার আছে সেটাকেও সরকারের দাম সমন্বয় করা উচিত। যাতে করে ডিএপির পাশাপাশি সেটা ব্যবহার হয়। কারণ সেখানে ৪টা উপাদান আছে।
দেশ সমাচার: করোনায় অনেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, সংকট উত্তরনে কি করনীয়?
বশির আহমেদ: আয়ের খাত অনেকটা সংকুচিত হচ্ছে। আমাদের সেবামূলক খাতগুলোও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্টাইল বা ফ্যাশনেবল যে ব্যবসাগুলো আছে সেগুলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহর থেকে মানুষ গ্রামমুখী হচ্ছে। আমি মনে করি এই পরিস্থিতিতে মানুষের যে সমস্ত বিষয় খুবই নিত্য প্রয়োজনীয় সে সমস্ত বিষয়ের দিকে ব্যবসায় ধাবিত হওয়া। নতুন প্রজন্মদের ওই সমস্ত খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর যারা গ্রামে যাচ্ছে গ্রামের প্রধান অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। আমি মনে করি কৃষি বর্তমানে লাভজনক পর্যায়ে রয়েছে। এটাকে আরও লাভজনক করার জন্য তরুণ প্রজন্ম আরও নতুন নতুন পদ্ধতিতে কৃষির চাষাবাদ করতে পারে। অনেক হাই ভ্যালু ক্রপস তারা চাষাবাদ করতে পারে। ফলের দিকেও তারা ধাবিত হতে পারে। সবজি উৎপাদন করতে পারে।
কৃষি অর্থনীতির ভবিষৎ দেখা যাচ্ছে, এর কারনে প্রচুর কর্মসংস্থানেরর সুযোগ হচ্ছে।কৃষি উৎপাদনে অংশ নিয়ে অনেকে তাদের নিজস্ব পরিবারের যেমন চাহিদা মেটাতে পারে, তেমনি বাজারে বিক্রি করে একটা ভালো আয় করতে পারবে। যার মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। আমি মনে করি, সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা কৃষকের জন্য, এই প্রণোদনার টাকা যেন কৃষক পর্যায়ে পায়। এই টাকা দিয়ে তারা আরও বেশি উৎপাদনমুখী হতে পারবে। উৎপাদনে গতিশীলতা আসবে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতি অনেক চাঙ্গা হবে। যে মানুষগুলো শহরের অর্থনীতি চাঙ্গা করেছে, একই মানুষগুলো গ্রামে গিয়ে যদি এই অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় বিভিন্ন ফুড প্রসেসিং এবং কৃষি উৎপাদন থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজে যেমন পশু পালন, মুরগি পালন, মাছের চাষ এগুলোতে যদি তারা সম্পৃক্ত হয় এবং এগুলো যদি লাভজনক করা যায় তাহলে গ্রামীণ অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী হবে। গ্রাম থেকে শহরের মানুষের চাপ কমবে। শহরের মানুষ বেশি হওয়ার কারণে এখন আর দূষণের চাপ নিতে পারছে না। সেখানেও একটা পরিবর্তন আসবে। গ্রাম এবং শহরের মধ্যে একটি সমন্বয়পূর্ণ ঘনত্ব থাকবে। যাতে করে পরিবেশেও স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে।
দেশ সমাচার: তরুণদের নিয়ে আপনার মূল্যবান পরামর্শ কি?
বশির আহমেদ: যে তরুনরা বসে না থেকে উৎপাদনমূখী কৃষিতে আসলে নিজে এবং দেশও উপকৃত হবে। আমাদের অনেকগুলো ব্যবসাগুলো রয়েছে সবগুলোই নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবসা। কোভিড সময়ে প্রতিটি ব্যবসায় মানুষের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত। কোভিড সিচুয়েশনেও আমরা মাঠে ছিলাম। কৃষকের সাথে ছিলাম। ওষুধ ব্যবসায়ও আমরা স্বাস্থ্যখাতের সাথে ছিলাম। আমাদের যে সমস্ত উপাদানগুলো রয়েছে মানুষের সেফটির জন্য সেগুলো নিয়ে আমরা মাঠে ছিলাম। সুতরাং এ সমস্ত সেক্টরে আমরা আরও গতিশীল করছি। সামনে এখানে আরও অনেক ম্যান পাওয়ার প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে তরুণ যারা বেকার আছে তাদের আহ্বান করবো আমাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে। পাশাপাশি আমরা কৃষিকে আরও গতিশীল করতে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য একটা পরিকল্পনা আছে। আমরা অলরেডি রিটেইল চেইন শপের মাধ্যমে কাজ করছি। তাছাড়াও এটা ব্যাপকভাবে যেন ফড়িয়া নির্ভর না হয়, সেটাকে কৃষক কিভাবে ভোক্তা পর্যায়ে সরাসরি দিতে পারে সেরকম আমরা একটি চ্যানেল তৈরি করেছি। আমরা মনে করি যদি গ্রামের তরুণরা তাদের উৎপাদিত ফসল সরাসরি বাজারজাত করতে পারে ভোক্তাদের কাছে তাহলে তারা লাভবান হবে। এখানে একটা বড় ধরনের কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে বলে আমি মনে করি।