নির্বাহী পরিচালক, এসিআই মোটরস
সমকাল :দেশে মোটরসাইকেলের বর্তমান বাজার সম্পর্কে জানতে চাই। ইয়ামাহার অবস্থান কেমন?
সুব্রত রঞ্জন দাস :দেশে বর্তমানে মোটরসাইকেলের চাহিদা বছরে চার লাখ। এর মধ্যে ইয়ামাহা বছরে ২০ হাজার সরবরাহ করছে। এখানে বলে রাখা দরকার, দেশে ১০০ সিসি বা এর নিচের মোটরসাইকেলের চাহিদা ৪৫ শতাংশ। আর ইয়ামাহা ১২৫ থেকে ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল বাজারজাত করছে। এর চেয়ে কম সিসির মোটরসাইকেল ইয়ামাহা উৎপাদন করে না। যে কারণে ক্রেতার সংখ্যা বড় না হলে বাজার অনুপাতে ক্রেতা ঠিকই আছে।
সমকাল :ক্রেতা ঠিক আছে বলতে কী বোঝাতে চাইছেন?
সুব্রত রঞ্জন দাস :আমাদের নজর প্রিমিয়াম সেগমেন্টের দিকে। ১৮ থেকে ৩০ বছরের তরুণ-যুবকদের চাহিদা বুঝতে পারি। তারা গতি চায় আর আমরা এর সঙ্গে যুক্ত করেছি নিরাপত্তা। ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের প্রতিটি মোটরসাইকেল যুগোপযোগী, আরামদায়ক ও টেকসই। ব্রেকিং সিস্টেম ও ব্যালান্স অনেক ভালো, যে কারণে ক্রেতারা সব সময় এ ব্র্যান্ডের ওপর আস্থা রাখছেন। তারা যেমন ব্র্যান্ড বদল করেন না, তেমনি নতুন ক্রেতাদের আমাদের ব্র্যান্ডের দিকে টেনে আনেন।
সমকাল :আগামীতে মোটরসাইকেলের চাহিদা বেড়ে কত হবে বলে মনে করছেন?
সুব্রত রঞ্জন দাস :চার বছর পর এ বাজার বেড়ে ১০ লাখ হবে বলে বিশ্বাস করি। এ সময়ে আমাদের মার্কেট শেয়ারও বাড়বে। এ জন্য আমরা কাজ করছি। জনসংখ্যা অনুপাতে এ বাজার আরও বড় হওয়া উচিত। বিশেষ করে মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামে প্রতি তিনজনের একটি মোটরসাইকেল রয়েছে। সেই হিসাবে আমরা অনেক পিছিয়ে। তবে দ্রুত এ অবস্থার পরিবর্তন হবে।
সমকাল :মোটরসাইকেলের রাইড শেয়ারিং ব্যবসা শুরু করেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। অনেক যুবক এটিকে পেশা হিসেবে নিচ্ছে। তাদের নিয়ে আপনারা কী ভাবছেন?
সুব্রত রঞ্জন দাস :যারা রাইড শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, তাদের জন্য আমরা প্রতিযোগিতামূলক দামে ১২৫ সিসির একটি মোটরসাইকেল এনেছি। স্যালুটো সিরিজের ১২৫ সিসি এই মোটরসাইকেল ব্লু-কোর প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী। এটি এক লিটারে ৭৮ কিলোমিটার চলে। লম্বা ও ফ্ল্যাট সিট এবং উঁচু বডির এই বাইক আরামদায়ক ও টেকসই। যারা ফুল টাইম রাইড শেয়ার ব্যবসায় যুক্ত হবেন, তাদের এটি সহজ কিস্তিতে দেওয়া হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আমাদের এ পদক্ষেপ বেকারদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করবে বলে মনে করি। রাইড শেয়ার প্রোভাইডারদের সঙ্গে আমরা কাজ করছি।
সমকাল :আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলুন।
সুব্রত রঞ্জন দাস :দেশে মোটরসাইকেল বাজারের ১০ শতাংশ ইয়ামাহার বাইক থাকবে- এই আমাদের আশা। সে লক্ষ্য অর্জনে কৌশলগত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গাজীপুরের রাজবাড়ীতে আমাদের সংযোজন কারখানায় শিগগির উৎপাদন শুরু হবে। দেশে আমাদের খুচরা যন্ত্রপাতি তৈরি ও সরবরাহের ভেন্ডর তৈরি হতে আরও ছয় থেকে সাত বছর লাগবে। একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে এ শিল্প আরও বিকশিত হবে। একটি উদাহরণ দিই, ইয়ামাহা যাদের কাছ থেকে তেলের ট্যাঙ্ক নেয়, অন্য উৎপাদনকারীরাও তাদের কাছ থেকেই তেলের ট্যাঙ্ক নিচ্ছেন। তেলের ট্যাঙ্ক তৈরির এই একটি প্রকল্পের বিনিয়োগ ৪০০ কোটি টাকা। দেশের ভেন্ডরদেরও স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে সরকার। ভবিষ্যতে ইয়ামাহার সঙ্গে যৌথভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদন করবে এসিআই মোটরস। ইয়ামাহার কর্মকর্তারা এ জন্য আমাদের প্রকল্প পরিদর্শনও করেছেন।
সমকাল :আপনাদের বিক্রয়-পরবর্তী সেবা এবং ব্যয় কমানোর উদ্যোগগুলো সম্পর্কে জানতে চাই।
সুব্রত রঞ্জন দাস :এসিআই মোটরসের অনেকগুলো সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। এগুলোতে ডিজিটাল উপায়ে কম্পিউটারের সাহায্যে মোটরসাইকেলের সমস্যা নিরূপণ করা হয়। এ সুবিধা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। তিন বছর বা ১২ হাজার কিলোমিটারের বিক্রয়োত্তর সেবা ছাড়াও চারটি ফ্রি সার্ভিসিং সুবিধা দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাদের। ইয়ামাহা মোটরসাইকেল ক্রেতারা পাচ্ছেন সার্ভিস কার্ড। এর মাধ্যমে তারা মূল্যছাড় পাবেন। যন্ত্রাংশের দাম কমানোর পাশাপাশি সার্ভিসিং ফি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে চাই। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সন্তুষ্টি আমাদের লক্ষ্য।
সমকাল :ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের টার্গেট গ্রুপ কারা, তাদের নিয়ে পরিকল্পনা কী?
সুব্রত রঞ্জন দাস :তরুণরা আমাদের ব্যবসার প্রাণ। তাদের কথা মাথায় রেখে স্টাইলিশ মোটরসাইকেল নিয়ে আসছি। দেখতে সুন্দর ও দীর্ঘস্থায়ী মোটরসাইকেলগুলোর ব্রেকিং সিস্টেম ও ব্যালান্স উন্নত। বাইকার গ্রুপগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তিগুলোর সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। তাদের বিভিন্ন শোভাযাত্রায় পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। দেশে ছোট-বড় অনেক বাইকার গ্রুপ তৈরি হয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করে। আমরা তাদের নানা ধরনের সহায়তা করছি। এতে তরুণ সমাজ সামাজিক অবক্ষয় থেকে নিজেদের দূরে রাখতে সক্ষম হবে বলে আমরা মনে করি।
সমকাল :সম্ভাবনাময় এ খাতে সরকারের নীতি-সহায়তা কেমন? আপনাদের পরামর্শ কী?
সুব্রত রঞ্জন দাস :মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে হলে এর যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী ভেন্ডরদের ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করতে হবে। যে ভেন্ডররা মোটরসাইকেলের খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করবে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি শিল্প পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে। এ জন্য বিদ্যমান কর ব্যবস্থাপনা আরও সহজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য সরকারকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।
সমকাল :সড়ক ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ সড়ক ও বাইকারদের নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?
সুব্রত রঞ্জন দাস :প্রথমে বলতে চাই, মোটরসাইকেল চালকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখন নারীরাও চালাচ্ছেন। তাই মোটরসাইকেল চালকদের জন্য আলাদা লেন করার বিষয়ে ভাবার সময় হয়েছে। উন্নত দেশগুলোকে অনুসরণ করে কিছু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। চালকদের, বিশেষ করে বেপরোয়া চালকদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। এতে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে। এতে মোটরসাইকেল শিল্প আরও এগিয়ে যাবে।