ধানের জন্য রোপণ থেকে শুরু করে কমপ্লিট সল্যিউশন
২০০৭ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে এসিআই মোটরস। এগ্রিকালচার সেক্টরে বাংলাদেশে যতগুলো প্রোডাক্ট রয়েছে তার ৫০% মার্কেট শেয়ার এই প্রতিষ্ঠানটির। বাংলাদেশের ৩ ভাগের এক ভাগ জমি এসিআই মোটরসের ট্রাক্টর দিয়ে চাষ হয়। এ ছাড়াও নতুন ধরনের মেশিনারিজও বাংলাদেশে চালু করে এসিআই মোটরস। কৃষিনির্ভর দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে দেশের কৃষকদের সমন্বয়ে কাজ করে যাচ্ছে তারা। পাশাপাশি কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করছে এসিআই মোটরস। এসিআই মোটরস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, বিভিন্ন মেশিনে সরকার ভর্তুকি দেওয়া শুরু করেছে। সরকারে সহায়তায় বিভিন্ন ধরনের মেশিন আমরা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছি। অনেক মেশিন আমরা নিজেরাই ম্যানুফ্যাকচারিং করি। আমরা সারা দেশের মানুষকে সার্ভিস দিয়ে ক্রেডিট দিয়ে বিক্রি করি। গ্লোবালিও খুব কম প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এত বৃহৎ পরিসরে কাজ করে। প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করি আমরা এখানে।
কৃষিকাজ সহজতর করার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ধানের জন্য একদম জমি চাষ থেকে শুরু করে লাগানো, কাটা, শুকানো, ঝাড়া, মাড়াই সবকিছুর একটা কমপ্লিট সল্যিউশন আমাদের রয়েছে। এগ্রিকালচারে শ্রমিকের ইনভলবমেন্ট দিন দিন কমছে। এগ্রিকালচার হলো একটা টাইম বন্ডেড অ্যাক্টিভিটি। যখন লাগানোর দরকার তখনই লাগাতে হবে। এগ্রিকালচারে যখন পিক অ্যাক্টিভিটি হয় এ সময় লেবার ঘাটতি রয়েছে ৪৫% প্রায়। তাই অনেক দামে শ্রমিক দরকার হয়। এ ক্ষেত্রে কৃষিনির্ভর যন্ত্রপাতি আপনার জন্য সাশ্রয়ী হবে। আমাদের একটা ট্রাক্টর দিয়ে যে কাজ করা যায় তার চেয়ে ১০/১৫ গুণ বেশি সময় লাগত ম্যানুয়ালি কাজটা করতে। এক একর জমি চাষ করতে ট্রাক্টরে লাগে এক ঘণ্টা। লাঙল দিয়ে করলে লাগবে দুই দিন। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে এসিআই মোটরস লিমিটেডের বর্তমান অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের তিন ভাগের এক ভাগ জমি এসিআই মোটরসের ট্রাক্টর দিয়ে চাষ হয়। পূর্ণ কৃষিখামার যান্ত্রিকীকরণ করার লক্ষ্যে ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রযুক্তি নিয়েই এসিআই মোটরস কাজ করছে। এর মধ্যে ধানের চারা রোপণের জন্য রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ধান কাটার জন্য রিপার, ধান কাটা এবং ধান মাড়াইয়ের জন্য কম্বাইন হারভেস্টার, ধান এবং বিভিন্ন ফসল শুকানোর জন্য ড্রায়ার, ফসল সংরক্ষণের জন্য কোকুন। এ ছাড়াও সেচের জন্য ডিজেল ইঞ্জিন, ওয়াটার পাম্প রয়েছে। এর বাইরেও আরও অনেক প্রোডাক্ট রয়েছে। হারভেস্টার নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম কাজ শুরু করে এসিআই মোটরস। লোভোল, ডেডং ছাড়াও আরও দুই একটি কম্বাইন হারভেস্টার নিয়ে এসেছে এবং সর্বশেষ ইয়ানমার হারভেস্টার নিয়ে এসেছে। করোনার সময়ে তো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শ্রমিক সংকট প্রকট হয়েছিল। ফসল ঘরে তুলতে আপনারা কীভাবে কৃষকদের সহায়তা করেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এসিআই মোটরস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, এসিআই মোটরস শুধু হাওর অঞ্চলেই তখন প্রায় ৮০০ কম্বাইন হারভেস্টার সরবরাহ করে; হাওর অঞ্চলে ব্যবহৃত প্রতি ১০টি হারভেস্টারের মধ্যে আটটিই ইয়ানমার কম্বাইন হারভেস্টার। বিগত দুই বছরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ২০০০ ইয়ানমার কম্বাইন হারভেস্টার সরবরাহের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মার্কেট শেয়ার নিয়ে এসিআই মোটরস শীর্ষে রয়েছে। মাত্র পাঁচ বছর আগেও যেখানে মাত্র শতকরা ১ ভাগ জমি যান্ত্রিকভাবে কর্তন করা হতো, সেখানে এখন প্রায় শতকরা ১৫ ভাগ জমি যান্ত্রিকভাবে কর্তন করা হয়। আমাদের হাওর অঞ্চলে তো সবচেয়ে বেশি বোরো ধান উৎপাদিত হয়। এই অঞ্চলে সেবা নিশ্চিত করতে এসিআই মোটরস বিশেষ কেমন সার্ভিস দেয় জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দুর্গম হাওর এলাকায় ইয়ানমার হারভেস্টার গ্রাহকদের বিক্রয়োত্তর সেবা ও স্পেয়ার পার্টস পৌঁছে দিতে রয়েছে এসিআই মোটরসের ইয়ানমার সার্ভিস সেন্টার। হারভেস্টারের সার্ভিসকে ত্বরান্বিত করার লক্ষেই দেশে প্রথম ইয়ানমার সার্ভিস সেন্টার হাওর-বেষ্টিত এলাকায় চালু করা হয়েছে। হাওর এলাকার হারভেস্টার গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে আমাদের আরেকটি সংযোজন হলো ইয়ানমার সার্ভিস ভ্যান। এই সার্ভিস ভ্যানে একজন দক্ষ টেকনিশিয়ান ও হারভেস্টারের প্রয়োজনীয় সব স্পেয়ার পার্টস থাকে। এই সার্ভিস ভ্যান দিয়ে স্বল্প সময়ে এসিআই মোটরস স্পেয়ার পার্টসসহ প্রয়োজনীয় সার্ভিস গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে।
কৃষি উদ্যোক্তার সহজ মনিটরিং এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এসিআই মোটরস প্রথমবারের মতো ঝঅ-জ প্রযুক্তি সংবলিত ইয়ানমার কম্বাইন হারভেস্টার প্রচলন করে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি এসিআই মোটরস ইয়ামাহা মোটরসাইকেল এবং কমার্শিয়াল ভেহিক্যাল নিয়েও কাজ করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৫০সিসি ইয়ামাহা মোটরসাইকেল আশা করছি খুব শিগগিরই মার্কেট লিডার হয়ে উঠবে। কমার্শিয়াল ভেহিক্যাল সেক্টরে বিশ্বের এক নম্বর কমার্শিয়াল ভেহিক্যাল ফোটন নিয়ে কাজ করছি, যা কৃষি পণ্য পরিবহন এবং উদ্যোক্তা তৈরিতেও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।